প্রতিদিনের জীবনে আমরা যখন একটু হাপিয়ে উঠি তখন মনে হয় এমন একটা স্থান থেকে যদি ঘুরে আসা যেত যেখানে থাকবেনা কোন কাজের চাপ , গাড়ির হর্ন কিংবা ইট কাঠের বন্দি জীবন । চাইলেই কি আর তা হয়? আমাদের এই ইচ্ছাগুলোকে প্রাধান্য দিয়েই এখন দেশের নানা প্রান্তে গড়ে উঠেছে রিসোর্ট । যেখানে মানুষ যাচ্ছে একটু অবসর সময় কাটানোর জন্য । আজকে বলছি তেমনি এক রিসোর্ট এর কথা যার নাম ‘সুইস ভ্যালি রিসোর্ট’ । নাম শুনেই প্রথম প্রশ্ন মাথায় আসে এই রিসোর্ট এর সাথে সুইস বা সুইজারল্যান্ড এর কি সম্পর্ক ? বলছি একটু অপেক্ষা করুন ।
আজ শেয়ার করছি আমাদের শমসেরনগরের সুইস ভ্যালি রিসোর্টে কাটানো অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। পরিবারসহ আমরা এখানে এসেছি শান্তিপূর্ণ ছুটি কাটাতে, যেখানে আমাদের সঙ্গে রয়েছে আমাদের দুই ছোট্ট সন্তান। যাদের বয়স ৫ বছর ও অন্যজন ৪ মাস ।
সুইস ভ্যালি কোথায়?
সুইস ভ্যালি রিসোর্ট এর অবস্থান মৌলভিবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কেচুরলতি এলাকায় । তবে এই এলাকাকে শমসেরনগর নামেই সবাই বেশি চিনেন । এর পেছনে একটি বড় কারন শমসেরনগর রেলস্টেশন । এই স্টেশনের কারনেই এই এলাকাকে সবাই শমসেরনগর নামেই সবাই ডাকেন ।
গুগল ম্যাপ লোকেশনঃ ক্লিক করুন ।
কিভাবে যাব?
এই রিসোর্ট এ যাওয়ার সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম বা কুমিল্লা এসব এলাকা থেকেই ট্রেনে করে সহজে চলে আসতে পারবেন । কারন এই রিসোর্ট এর পাশে দুটী স্টেশন রয়েছে । ১) শমসেরনগর স্টেশন , যেটি ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং ভানুগাছ স্টেশন যেটি ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এই দুইটি স্টেশনের যে কোন একটীতে ঢাকা অথবা চট্রগ্রামের সাথে সিলেট যাওয়া আসার সব ট্রেন থামে । তাই এখানে নেমে একটি সিএনজি অটো রিকশা নিয়ে সহজেই চলে আসতে পারবেন ।
যদি বাসে আসেন তবে শ্রীমঙ্গল বা কমলগঞ্জ এর বাসে আসলে দ্রুত আসতে পারবেন । তবে ট্রেনে আসাটাই সবচাইতে সহজ । যদি সিলেট থেকে আসেন তবে কালনি এক্সপ্রেস , পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস বা জয়ন্তিকাতে আসলে দুপুরের ভেতরে চলে আসতে পারবেন । যদি ঢাকা থেকে আসেন তবে সবচাইতে ভাল পারাবত এক্সপ্রেস , চট্রগ্রাম অথবা কুমিল্লা থেকে আসলে পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস ভাল হবে । খুলনা বা দক্ষিনবংগ থেকে আসলে শ্রিমংগল এর সরাসরি বাস ভাল ।
চাইলে বুকিং করে যেতে পারেন Tour Sylhet এর মাধ্যমে । মাঝে মাঝে অফারে কমরেটে রুম পাওয়া যায় ।
রিসোর্টের পরিবেশ:
সুইস ভ্যালি নাম শুনলেই সুইজারল্যান্ডের কথা মনে পড়ে। রিসোর্টটির মালিক সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দা এবং এখানে গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে ইউরোপীয় সবুজের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য এটি এক আদর্শ স্থান। সবুজ ঘাসের উপরে সাদা বেঞ্ছ ইউরোপের আবহের কথাই মনে করিয়ে দেয় ।
এখানে রয়েছে নিরিবিলি সময় কাটানোর চমৎকার পরিবেশ । রয়েছে ছোট একটি সুইমিং পুল । রিসোর্টের ভেতরেই রয়েছ ফুটবল খেলার জন্য একটি মাঠ । তাই দলবল নিয়ে আসলে বল আনতে ভুলবেন না । আবার ফুটবল খেলে পাশে গোসল করার জন্য রয়েছে বড় একটি পুকুর ।
ভেতরে ছোট বাচ্চাদের সময় কাটানোর জন্য সুন্দর ছোট ছোট ব্যাবস্থা রয়েছে । আবার সন্ধ্যার পর আড্ডা দেয়ার জন্য পাবেন দারুন পরিবেশ । চা বাগান বা পাহাড়ের এই দিকগুলোতে সন্ধ্যার সময় আড্ডা দেয়ার দারুন এক পরিবেশ পাওয়া যায় ।
এছাড়াও রয়েছে ছোট একটি চিড়িয়াখানা , যদিও এর ভিতরে খুব বেশি প্রানি নেই তবে বাচ্চারা অনেক আনন্দ পায় ।
থাকার সুবিধা:
এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে, যার দৈনিক ভাড়া ২,৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৫,৫০০ টাকা পর্যন্ত। আমরা যে রুমে অবস্থান করেছি, সেখানে চারজন একসাথে থাকতে পারি। প্রতিদিন সকালে কমপ্লিমেন্টরি ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা রয়েছে এবং আপনি যখন তখন সুইমিং পুল ব্যবহার করতে পারবেন।
এখানে রয়েছেঃ
ফ্রি ওয়াইফাই ।
পারকিং সুবিধা ।
এখানে কিছু রুম রয়েছে যার বারান্দায় বসেই আপনি ট্রেন আসা যাওয়ার সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
স্থানীয় খাবার:
এই রিসোর্ট এর খাবার অনেক ফ্রেশ এবং সুস্বাদু । হাস - মুরগি ভিতরে লালন পালন করা হয় । এখানে আসলে হাসের মাংস দিয়ে অবশ্যই একবেলা খাওয়ার চেষ্টা করবেন । ভর্তাও অনেক মজার । রিসোর্ট এর আশে পাশে রেস্টুরেন্ট নেই , যেটি আছে তাও প্রায় ১-১.১৫ কিলোমিটার দূরে । যদিও এখানে দাম একটু বেশি খাবারের এই রিসোর্ট এ , তবে খেয়ে আপনি তৃপ্তি পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
রিসোর্ট থেকে সিএনজি নিয়ে দু-এক ঘন্টার জন্য ঘুরে আসতে পারেন শমসেরনগরের বিখ্যাত স্থানগুলোতে, যেমন ক্যামেলিয়া টি গার্ডেন, লেক, এবং গলফ মাঠ।
দর্শনীয় স্থানসমূহ:
চা বাগান
ক্যামেলিয়া চা বাগানের লেক
গলফ মাঠ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিমানবন্দর
এছাড়াও আপনি চাইলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান , কমলগঞ্জ লেক , মনিপুরি পাড়া এসব এলাকা এখান থেকেই ঘুরে দেখে আসতে পারবেন ।
বাড়তি সতর্কতাঃ
যেহেতু এটী একটি গ্রামীণ পরিবেশ এর এলাকা তাই বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে কিছু জিনিষ মাথায় রাখবেন,
এখানে বাইরে বিভিন রাইডে পিপড়া থাকে যেগুলো কামড় দিলে বাচ্চা ব্যাথা পাবে ।
সন্ধ্যার পর মশা বাড়তে পারে তাই কটেজ এর দরজা ও জানালা বন্ধ রাখাই তখন ভাল ।
যেহেতু ঘাস আছে তাই জোঁক থাকতে পারে , এটা মাথায় রেখে পোশাক নির্বাচন করবেন । আবারও বলছি থাকবেই এমন কোন কিছু না , ‘থাকতে পারে’ । ভাল কথা , শুনেছি জোঁক কামড় দিলে নাকি শরিরে দুষিত রক্ত বের হয়ে যায় !
যারা শিতের সময় আসবেন তারা শীতের প্রস্তুতি ভালভাবে নিবেন কারন এই দিকটাতে অনেক শীত থাকে আর বর্ষার সময় ছাতা বা রেইনকোট ।
তবে গ্রামীণ প্রকৃতির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে এত টুকু তো আমাদের ত্যাগ করতেই হবে ।
সব মিলিয়ে, সুইস ভ্যালি রিসোর্টে থাকার জন্য ২,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮-৯ হাজার টাকার কটেজ রয়েছে ভালো খাবারের খরচ জনপ্রতি ৪০০ টাকা। আপনার পরিবার নিয়ে এখানে কয়েকদিন কাটাতে সত্যিই চমৎকার অভিজ্ঞতা হবে।
সুইসভ্যালিতে আমাদের কাটানো সময় নিয়ে থাকল ইউটীউব ভিডিও , দেখার আমন্ত্রন রইল । আশা করছি ভাল লাগবে ।
যোগাযোগ ও বুকিং এর জন্যঃ
0 মন্তব্যসমূহ