সিলেট ট্যুরের কমপ্লিট গাইড লাইন । হোটেল-গাড়ি সব কিছু ।

ছুটি পেলে দেশের ভিতরে যখন আমরা ট্যুর এর প্ল্যান করি তখন মাস্ট অপশন হিসেবে আসে সিলেটের নাম । সিলেট, বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় ট্যুর ডেস্টিনেশন । ঢাকা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার । ভারতের মেঘালয়ের রাজ্যের পাশেই থাকা সিলেটে রয়েছে মন মাতানো অনেক সুন্দর সুন্দর স্পট ।


sylhet tour

যারা পরিবার নিয়ে প্রথমবার সিলেট ঘুরতে আসেন তার সিলেট আসার আগে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কোথায় থাকবেন বা কোথায় ঘুরবেন । তাদের এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই আমাদের এই পোস্ট ।


আশা করছি পোস্টটি পুরোপুরি পড়লে সিলেট আসার আগে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা অনেক ভাল হবে।



এই পোস্ট থেকে আমরা জেনে নিবঃ


১. সিলেট আসার আগে কি কি জেনে নিতে হবে?

২. সিলেটে কোথায় থাকবেন?

৩. সিলেটে কোথায় ঘুরবেন?

৪. সতর্কতা ।

৫. খরচ কেমন?

৬. কোথায় খাওয়া দাওয়া করবেন?

৭. বাড়তি আর কি করতে পারেন?

৮. সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের সময়সুচি।

৯. সিলেট যাওয়া-আসার জন্য ভাল বাস।


  • সিলেট আসার আগে জেনে নিনঃ


সিলেট কিন্ত একেক সিজনে একেক রকম । যেহেতু সিলেটের বেশিরভাগ স্পটই পাহাড় নদীর পানি কেন্দ্রিক তাই একেক সিজনে স্পট গুলোর সৌন্দর্য একেক রকম থাকে । যেমন শীতকালে লালাখাল এর পানি  অনেক সুন্দর ও নীল থাক কিন্তু বর্ষাকালে নদীর ঢলের সময় লালাখাল এর পানির রঙ এতটা সুন্দর না এবং অনেক বেশি পাহাড়ি ঢল এর সময় এখানে ভ্রমন ততোটা নিরাপদও না ।


শীতকালে সাধারনত সাদাপাথর বা বিছানাকান্দিতে পানি থাকেনা । তাই আসার আগে একটু খোঁজ নিলে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে । চাইলে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে প্রশ্ন করলে এই উত্তর পেয়ে যাবেন । আবার খুব বেশি বৃষ্টি যখন থাকে তখন মাঝে মাঝে ঢল নামে , তখন এখানকার নদীতে না নেমে একটু দূর থেকেই উপভোগ করা উত্তম ।


বাকি স্পট এর বেশিরভাগ গুলো বছরের প্রায় সবসময় নিরাপদ ।


এছাড়াও জেনে নিবেন হোটেলে রুম খালি আছে কিনা । সাধারনত ৩ দিনের ছুটি এলে শুক্রবার ও শনিবারে সিলেট শহরের হোটেলগুলোতে অনেক চাপ থাকে । অনেক ক্ষেত্রে রুম পাওয়া যায় না । তাই এক্ষেত্রে আগে থেকে রুম বুক করে আসা ভাল , বিশেষ করে পরিবার ও বাচ্চা নিয়ে যারা আসেন ।


  • কোথায় থাকবেনঃ


সিলেট শহর খুব একটা বড় না । আপনি শহরের যেখানেই থাকেন না কেন, খুব সহজেই ট্যুর ডেস্টিনেশনের গাড়ি পাবেন । যদি গাড়ী রিজার্ভ করে ট্যুর দেন তাহলে সব প্লেসই আপনার জন্য সমান আর যদি বাসে অথবা লেগুনা দিয়ে ট্যুর করতে চান,

তাহলে সাদাপাথর / বিছানাকান্দি / রাতারগুল যাওয়ার জন্য- আম্বরখানা পয়েন্ট

অথবা জাফলং/ লালাখাল যাওয়ার জন্য সোবহানিঘাট কিংবা নাইওরপুরল এ যেতে হবে ।


এই দুইটা ডেস্টিনেশনে শহরেরর যে কোন জায়গা থেকে রিকশা নিয়ে চলে আসা যায় তাই চিন্তার কোন কারন নেই ।


তবে এই প্লেসগুলোর আশে পাশে থাকতে চাইলে নিচের এই হোটেল গুলো ভাল হবে ।উল্লেখিত সব হোটেলই মধ্যবিত্তের নাগালের ভিতরে ।


  • হোটেল সুপ্রিম - মিরাবাজার

  • মিরা গার্ডেন - নাইওরপুল

  • ফরচুন গার্ডেন - নাইওরপুল

  • হোটেল ভ্যালি গার্ডেন

  • হোটেল হিলভিউ

  • হোটেল গ্র্যান্ড সুরমা 

  • হোটেল হলি গেট

  • হোটেল রিভার ভিউ


যদি এর থেকে ভাল মানের হোটেল চান তাহলে আমরা সাজেস্ট করিঃ


  • হোটেল রোজ ভিউ - উপশহর

  • হোটেল নিরভানা ইন 

  • হোটেল নুরজাহান গ্র্যান্ড - দরগাহ গেট

  • হোটেল গ্র্যান্ড মুস্তাফা আবাবিল - দরগাহ গেট

  • হোটেল স্টার প্যাসিফিক - দরগাহ গেট 


৫ তারকা বা কাছাকাছি মানের হোটেল এ থাকতে চাইলে বেছে নিতে পারেন হোটেল গ্র্যান্ড সিলেটকে যা বিমানবন্দর এর পাশে অবস্থিত ।


শহরের পাশে রিসোরট এর সংখ্যা কম, এর মধ্যে ভাল মানের কিছু রিসোর্ট , যেখানে প্রকৃতির সম্পূর্ণ স্বাদ পাবেন, এগুলোর মধ্যে শুকতারা রিসোর্ট, নাজিমগর রিসোর্ট অন্যতম। তবে এগুলোর ভাড়া তুলনামুলক বেশি ।


সিলেটের হোটেলর বুকিং দিতে ভিজিটঃ Tour Sylhet


  • কোথায় ঘুরবেনঃ


আপনার ট্যুর যদি বর্ষাকালে হয় তাহলে প্ল্যান করতে পারেন এভাবেঃ


Day 1: সাদাপাথর অথবা বিছানাকান্দি + রাতারগুল + মালনিছড়া চা বাগান ।

Day 2: জাফলং + মায়াবি ঝর্না + সংগ্রাম পুঞ্জি+ শাপলা বিল

Day 3: শ্রীমঙ্গল অথবা সুনামগঞ্জ ( টাঙগুয়ার হাওর)

Day 4: শহরের বিভিন্ন নিদর্শন অথবা শমসেরনগর ।


যদি আপনার ট্যুর শীতের সময় হয় তাহলেঃ


Day 1: সাদাপাথর / বিছানাকান্দি + রাতারগুল+ মালনিছড়া চা বাগান

Day 2: লালাখাল + জাফলং

Day 3: সুনামগঞ্জ যাদুকাটা নদি + নিলাদ্রি + শিমুল বাগান অথবা শ্রীমঙ্গল ।

Day 3: শহরের বিভিন্ন স্থান অথবা শমসেরনগর ।







  • সতর্কতাঃ


সিলেটের কিছু স্পট এ অবশ্যই বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত । বিশেষ করে বর্ষাকালে সাদাপাথর, বিছানাকান্দি, জাফলং, লালাখালে । তাই সতর্কতা হিসেবে নিচের এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা ভালঃ


  • নৌকায় একসাথে খুব বেশি মানুষ একসাথে উঠবেন না , বা উঠার পর একসাথে থাকবেন না এতে ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হয় । খুব বেশি লাফালাফি বা হৈ হুল্লোড় করা থেকে বিরত থাকতে পারেন না।


  • এডভেঞ্ছার এর নেশায় খুব বেশি ঝুকি নিবেন না । এইসব নদীর নিচে পাথর থাকে তাই স্লিপ কেটে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে । এছাড়া নদীর তলদেশ অনেক বেশি উচানিচা তাই সাতার না জানলে অবশ্যই বেশি পানিতে নামবেন না ।


  • অনেক সময় হেটে বা পাহাড় বেয়ে হুট করে পানিতে নেমে সাতার কাটার চেষ্টা করলে মাংসপেশি জমে যায় এবং সাতার জানলেও দুর্ঘটনা ঘটে, তাই পানিতে নামার আগে অবশ্যই শরীরের কিছু অংশ আগে পানিতে রেখে তাপমাত্রা এডজাস্ট করে নিবেন।


  • স্থানিয়দের সাথে কখনই খারাপ ব্যবহার করবেন না । সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করবেন না । 


  • পিচ্ছিল পাথর এ সাবধানে হাটবেন ।


যে কোন দুর্ঘটনায় সহযোগিতা নিতে পারেন ৯৯৯ নাম্বার এর।






খরচ কেমন?


সিলেট থেকে জাফলং-সাদাপাথর-বিছানাকান্দি বাস বা লোকাল সিএনজি দিয়ে যাওয়া আসা করা যায় খরচ হবে ১৫০- ৩০০ টাকার মধ্যে । এই স্পটগুলোতে নৌকা ভাড়া লাগবে ১০০০-১৬০০ টাকা । একেকটি  নৌকাতে ৮ থেকে ১৫ জন বসা যায়।


গাড়ি রিজার্ভ করলে ২০০০ থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে । ছোট ফ্যামিলি হলে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে ট্যুর দিতে পারেন ।




লোকাল গাড়ি গুলো কোথা থেকে ছেড়ে যায়ঃ


১. জাফলং - লালাখাল -জইন্তিয়া- শাপলাবিল যাওয়ার জন্য বাস বা লেগুনা গুলো পাবেন সবহানিঘাট, নাইওরপুল, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ বা টিলাগড়ে।


২. সাদাপাথর- বিছানাকান্দি-রাতারগুল যাওয়ার বাস-সিএনজি অটোরিকশা পাবেন আম্বরখানা পয়েন্ট এ ।


৩. শ্রীমঙ্গল যাওয়ার বাস পাবেন নতুন বাস টারমিনাল এ ।


৪. সুনামগঞ্জ যাওয়ার বাস পাবেন কুমারগাও বাস টারমিনালে ।


গাড়ি রিজার্ভ এর জন্য ফোন দিতে পারেন: ০৯৬ ১১ ৮২০ ৮৯৩ অথবা অনলাইন সাইটে সরাসরিঃ এখানে



অথবা ফেসবুক পেজ: ট্যুর সিলেটে।
whatsapp: 01339064646

কোথায় খাবেনঃ


সিলেটে লাঞ্চ ও ডিনারের জন্য অনেক ভাল হোটেল রয়েছে যেগুলো দামের মধ্যে অনেক সস্তা ও সুস্বাদু । এই রেস্টুরেন্ট গুলোর মধ্যে পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট ও পানসি রেস্টুরেন্ট নাম করা । এছাড়া পালকি, ডীংগি রেস্টুরেন্ট গুলোও একি রকম ।


ইন্ডিয়ান ফুডের জন্য উন্দাল রেস্টুরেন্ট এ যেতে পারেন । এটি জিন্দাবাজারে অবস্থিত । চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এর জন্য শহরের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই রেস্টুরেন্ট রয়েছ , এর মধ্যে সিজন, রেইনবো, লাং তু রাই বেশ জনপ্রিয় ।




আর কি করবেনঃ


ঘুরাঘুরির পাশাপাশি যদি সুইমিং করতে চান তবে চলে যেতে পারেন উপশহরে অবস্থিত গারডেন টাওায়ারের সুইমিং পুলে অথবা মজুমদারিতে ব্রিটানিয়ার বিশাল এক সুইমিং পুল রয়েছে ।


নিরিবিলি সময় কাটাতে চাইলে চলে যেতে পারেন ধোপাদিঘির পারে বা টীলাগর ইকোপার্কে।



ঢাকা থেকে কখন কোন ট্রেন ছাড়েঃ


ভোরে ছাড়ে পারাবত , দুপুরের ভেতরেই সিলেট বা শ্রীমঙ্গল থাকতে পারবেন ।

দুপুরে ছাড়ে জয়ন্তিকা , পৌছায় রাতে ।

বিকালে কালনি , পৌছায় রাতে ।

রাতে ছেড়ে আসে উপবন এক্সপ্রেস , পৌছায় ভোরে ।


চট্রগ্রাম থেকে কখন কোন ট্রেন ছাড়েঃ


ভোরে ছাড়ে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস পৌছায় সন্ধ্যায়।

রাতে ছেড়ে আসে উদয়ন এক্সপ্রেস পৌঁছায় ভোরে ।


সিলেট থেকে ছেড়ে যায়ঃ


সিলেট থেকে মোট ৬ টী আন্তনগর ট্রেন ছেড়ে যায় যার মধ্যে ৪ টী যায় ঢাকা ও ২ টি চট্রগাম ।


ঢাকার ট্রেনঃ সকালে কালনি এক্সপ্রেস , দুপুরে জয়ন্তিকা, বিকালে পারাবত এক্সপ্রেস, রাতে উপবন এক্সপ্রেস ।

চট্রগ্রাম এর ট্রেনঃ সকালে ছাড়ে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস , রাতে উদয়ন এক্সপ্রেস ।




উদয়ন এক্সপ্রেস নিয়ে আমার ইউটিউব ভিডিওঃ 





ভাল বাসঃ


ঢাকা থেকে নন এসি ভাল বাসের মধ্যে ইউনিক সবচাইতে জনপ্রিয় । রয়েছে এনা , বিলাস , হানিফ ও শ্যামলি পরিবহন । যারা উত্তরা- টংগি- গাজিপুর দিয়ে আসতে চান তাদের জন্য রয়েছে এনা পরিবহন ও বিলাস পরিবহন ।


এসির মধ্যে রয়েছে গ্রিন লাইন, এনা, লন্ডন এক্সপ্রেস , ইম্পেরিয়াল ও জেদ্দা এক্সপ্রেস ।


চট্রগ্রাম থেকে আসে লন্ডন এক্সপ্রেস, সাউদিয়া , ইউনিক ও এনা ।


খুলনা থেকে আসে মামুন পরিবহন, হানিফ পরিবহন । ফরিদপুর, চুয়াডাংগা থেকে গোল্ডেন লাইন ।

 

রাজশাহি ও উত্তরবংগ থেকে আসে হানিফ পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ।


আশা করছি আপনার ট্যুর সফল ও সুন্দর হবে।


প্রয়োজনে, ট্যুর সিলেটঃ ০৯৬ ১১ ৮২০ ৮৯৩







আর কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ