ইন্ডিয়ান ভিসা পাওয়ার জন্য ডকুমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । আজকের এই পোস্টে জানাচ্ছি ইন্ডিয়ান ট্রাভেল ভিসার জন্য আপনি কি কি ডকুমেন্ট জমা দিবেন এবং থাকছে এ সম্পর্কিত টিপস । সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাভেল ভিসার রিজেক্ট হওয়ার একটা বড় কারন হচ্ছে ডকুমেন্ট সংক্রান্ত ঝামেলা থাকা । অনেক সময় যাদের আগে ভিসা হয়েছিল তারাও ভিসা পাচ্ছেন না শুধু মাত্র ডকুমেন্ট এর সমস্যা থাকার কারনে । অনেকেই অন্যের বুদ্ধি শুনে নকল বা ফেক ডকুমেন্ট সাবমিট করেন যেটা জালিয়াতি হিসেবে গন্য হয় এবং ভবিষ্যতে আপনার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কমিয়ে দেয় ।
সুতরাং শুরুতেই বলে ডকুমেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে আপনি শতভাগ সততা পালনের চেস্টা করবেন এবং ভিসা এপ্লিকেশন এর সাথে আপনাকে জমা দিতে হবেঃ
আপনার এন আইডি কার্ড অথবা বার্থ সারটিফিকেট এর কপি । (আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট এর নামের সাথে যাতে মিল থাকে )
পুরাতন সকল পাসপোর্ট এর কপি । (ভারতীয় দুতাবাস পুরাতন সকল পাসপোর্ট এর কপি চায়, যদি এর মধ্যে কোনটি হারিয়ে থাকে তবে তা জিডি আকারে জানাতে হবে)
পুরাতন ভিসার কপি । (আপনার পুরাতন ভিসা সমুহের কপি , যদি আপনি সর্বশেষ ভিসা পাওয়ার পরেও ভ্রমন না করে থাকেন তবে তার জন্য আপনাকে এপ্লিকেশন করতে হবে দুতাবাস বরাবর)
২ বাই ২ সাইজের ফরমাল ছবি । (সাম্প্রতিক সময়ের হলে সবচাইতে ভাল , খেয়াল রাখতে হবে ছবিতে যাতে আপনার কানের অংশ বুঝা যায়)
ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা ক্রেডিট কার্ডে ডলার এন্ডরসমেন্ট ।
পেশাগত প্রমানপত্র ।
ইউটলিটি বিলের কপি ।
ভিসা ফি পেমেন্ট স্লিপ ।
ভিসা এপ্লিকেশনঃ এখানে ভিসা এপ্লিকেশন আপনি কিভাবে ফিলাপ করবেন তার প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে বলে দেয়ার চেস্টা করছি ।
প্রথমে, ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন এর ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনাকে ফরম ফিলাপ করতে হবে ।
ভিসা এপ্লিকেশন লিংকঃ ভিসা এপ্লিকেশন ওয়েবসাইট
আপনার পাসপোর্ট এর তথ্য অনুযায়ি এই ফরম ফিলাপ করবেন । এখানে ধাপে ধাপে আপনার কাছে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হবে । সব তথ্য এর বানান যাতে আপনার পাসপোর্ট বা এন আই ডি এর সাথে হুবুহু মিল থাকে ।
এপ্লিকেশনটি প্রিন্ট করার পর সেখানে সংযুক্ত করবেন ২ বাই ২ এর ছবির সফট কপি । ছবির ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন । যেমনঃ
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড যাতে সাদা রঙ এর হয় ।
ছবিতে যাতে আপনার কান দেখা যায় ।
এর আগে যে ছবি ব্যাবহার করে ভিসা পেয়েছেন তা পুনরায় দেয়ার থেকে বিরত থাকবেন ।
ভিসা এপ্লিকেশন এর সময় অনলাইনে যে ছবি দিয়েছেন সেই একি ছবি প্রিন্ট করে সংযুক্ত করবেন ।
এনআইডি অথবা বার্থ সারটিফিকেটঃ একটি দেশের নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয় পত্র বা বার্থ সার্টিফিকেট হচ্ছে প্রথম প্রমানপত্র । আপনার ভিসা এপ্লিকেশন এর সাথে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সংযুক্ত করবেন । জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে দিবেন বার্থ সার্টিফিকেট এর কপি । যারা প্রাপ্তবয়স্ক এবং যাদের ইতিমধ্যে এন আই ডি থাকার কথা তাদের জন্য এন আই ডি দেয়াটা সবচাইতে সেফ ।
পুরাতন সকল পাসপোর্ট এর কপিঃ আপনার কাছে থাকা সকল পাসপোর্ট এর ২য় এবং ৩য় পাতার ছবি সংযুক্ত করবেন ভিসা এপ্লিকেশন এর সাথে । যদি কোন পাসপোর্ট হারিয়ে যায় তাহলে সাথে জিডির কপি দিতে হবে । তবে হারানো পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায় । কিন্তু আপনি যদি ভাল ভাবে প্রমান করতে পারেন যে আপনার পাসপোর্ট দুর্ঘটনা বশত আপনার কাছে নেই তাহলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ।
পুরাতন ভিসার কপিঃ আপনি যদি এর আগে ইন্ডিয়া ভিজিট করে থাকেন, তবে পূর্ববর্তী সকল ভিসার ফটোকপি সংযুক্ত করবেন আপনার এপ্লিকেশন এর সাথে । একি সাথে সংযুক্ত করতে পারেন ইমিগ্রেশন সিল এর কপি । যারা প্রথমবার এপ্লিকেশন করবেন বা আগে ভিসা ছিল না, তাদের এখানে এধরনের কোন ডকুমেন্ট সংযুক্তের প্রয়োজন নেই ।
ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট অথবা ডলার এন্ডরসমেন্ট এর ছবিঃ আপনি যে ট্রাভেল করতে সক্ষম সেটা জানানোর জন্য আপনাকে সাথে যোগ করতে হবে আপনার ব্যাঙ্ক স্টেট্মেন্ট এর কপি । যা নুন্যতম ৩ মাস মেয়াদি হতে হবে এবং সেখানে জমা থাকতে হবে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা । আপনার যদি ক্রেডিট কার্ড থাকে এবং ক্রেডিট কার্ড এর বিপরীতে ডলার এন্ডরস করা থাকে তবে তার কপি জমা দিয়েও ভিসা পাওয়ার সক্ষমতা প্রমান করা যায় । এক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড এর একটি ছবি , এবং পাসপোর্ট এর এন্ডোরসমেন্ট পেজের ছবি আপনাকে সংযুক্ত করতে হবে ।
পেশাগত প্রমানপত্রঃ ইন্ডীয়ান ভিসার জন্য পেশাগত প্রমানপত্র আরেকটি গুরুত্বপূরণ বিষয় । অনেকেই মিথ্যা বা জাল পেশাগত প্রমানপত্র দিয়ে ভিসা পান না । পেশাগত প্রমানপত্র আপনাকে যে কোন দেশের দুতাবাস পজেটিভ ভাবে প্রমান করে ।
যারা চাকুরি করেন তারা তাদের অফিস আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিবেন সাথে যোগ করবেন ভিজিটিং কার্ড (যদি থাকে) । জমা দিতে পারেন আপনার স্যালারি সার্টিফিকেট এর কপি । এক কপি এনওসি বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট যা আপনার পেশাগত প্রমানকে আরো জোরদার করবে । এর কোন কিছুই দিতে না পারলে যেখানে আপনি চাকুরি করেন সেখান থেকে যে কোন ধরনের একোনোলেজমেন্ট স্লিপ ।
যারা ব্যবসা করেন তারা জমা দিবেন ট্রেড লাইসেন্স এর কপি যেখানে আপনার নাম উল্লেখিত রয়েছে । সাথে যোগ করবেন বিন সার্টিফিকেট এর কপি ( যদি থাকে । )
আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন, তবে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্ত আইডি কার্ড এর কপি জমা দিবেন । সাথে আপনার ছবি সংবলিত রেজিস্ট্রেশন কার্ড অথবা এডমিট কার্ড এর ছবি । যেভাবে ছাত্র হিসেবে নিজেকে প্রমান করা যায় ।
ইউটিলিটি বিল এর কপিঃ আপনি যে স্থানে থাকেন সেই স্থানের যে কোন একটি ইউটিলিটি বিলের কপি আপনাকে জমা দিতে হবে যেটি প্রমান করে যে আপনি সেখানের বাসিন্দা । এটি হতে পারেঃ
ইলেক্ট্রিসিটি বিল এর কপি
গ্যাস বিল এর কপি
পানির বিল এর কপি
টেলিফোন বিল এর কপি
ইন্টারনেট বিল এর কপি
ভিসা ফি পেমেন্ট স্লিপঃ আপনার ভিসা এপ্লিকেশন ফরমটি ফিলাপের পর আপনি ওয়েব ফাইল নাম্বার দিয়ে ভিসা ফি পেমেন্ট করতে পারেন । সেই পেমেন্ট স্লিপ এর কপি প্রিন্ট করে যুক্ত করে নিবেন ভিসা এপ্লিকেশন এর সাথে । ব্যাস, উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্ট গুলো সহ রেডি করে ফেলবেন আপনার ভিসা এপ্লিকেশন এর ফাইল ।
ফাইল জমাঃ ফাইল জমা দেয়ার সময় মাথায় রাখবেন আপনার বর্তমান ঠিকানা যেখানে সেখানের দুতাবাসে যাতে আপনার ফাইল জমা হয় । প্রতি এলাকা অনুযায়ি আলাদা আলাদা দুতাবাস রয়েছে । আপনি এক এলাকার বাসিন্দা হয়ে যাতে অন্য এলাকাতে ফাইল জমা প্রদান না করেন । এতে আপনার ফাইল রিজেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
আরও যা যা খেয়াল রাখবেনঃ
ভিসা এপ্লিকেশন এর সাথে সংযুক্ত ডকুমেন্ট গুলো রঙ্গিন বা সাদাকালো যে কোন একভাবে সাবমিট করা যায় । তবে তা যেন ঝাপসা না হয়।
কোন ধরনের ফেক ডকুমেন্ট সাবমিট করা থেকে বিরত থাকুন ।
আপনার ভিসা এপ্লিকেশন এর সাথে যাতে ডকুমেন্ট এর তথ্য গুলোর মিল থাকে ।
ইউটিলিটি বিল এর ক্ষেত্রে তা যেন ৬ মাসের বেশি পুরাতন না হয় ।
আশা করছি তথ্যগুলো আপনার ভিসা এপ্লিকেশন এর ফাইল রেডি করতে সহায়তা করবে । ধন্যবাদ । অনেকের ভিসার ডকুমেন্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন বা সমস্যা থাকে । সেগুলো আপনি নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আমরা সেগুলোর উত্তর জানানোর চেষ্টা করব । ভাল লাগলে পাশে থাকবেন ।
ভিসা ডকুমেন্ট নিয়ে আমাদের এই ইউটিউব ভিডিও দেখার আমন্ত্রন রইলঃ
0 মন্তব্যসমূহ