বরাবরের মত সিকিম যাওয়ার আগেও একটা বাজেট করে নিলাম ।
আমার এই বাজেটিং এ আমাকে হেল্প করে গুগল । অনেক ঘেটে গুগল থেকে একটা প্ল্যান রেডি করলাম । সিলেট থেকে আমাদের প্রায় ২৯ ঘন্টা ভ্রমন করে যেতে হবে আবার ফিরার ক্ষেত্রে ২৯ ঘন্টা । তার মানে ৬ দিনের এই ট্যুরে আমাদের প্রায় ৫৮ ঘন্টা গাড়িতে কাটাতে হবে ।
ধর তক্তা মারো পেরেক । বউ বাচ্চা নিয়ে রওনা দিলাম বিসমিল্লাহ করে । আমাদের ভাগ্য খারাপ ছিল কারন সেদিন ছিল প্রচন্ড গরম । তো সিলেট থেকে যাত্রা করার মোটামুটি ২ ঘন্টার ভিতরে বউ বাচ্চা দুইজনই কাইত হয়ে গেল এক দিকে । গ্যাস এর কারনে আমার ও কেমন কেমন জানি লাগছিল, মেঘালয়ের পাহাড়ি বাকে মনে হচ্ছিল এই মনে হয় বমি হয়ে গেল ।
এভাবেই কস্ট করে সিলেট থেকে চলে এলাম শিলিগুড়ি , যদিও মাঝপথে ট্রেনের যাত্রা কিছু টা স্বস্তি দিয়েছে । শিলিগুড়ি নামার পর এক দালাল ভাই আমাকে হাসি দিয়ে বলল 'দাদা কিভাব হেল্প করতে পারি ? চলুন আমাদের অফিসে বসুন , একটু জিরুন, হালকা হন' আমি আবার মানুষকে সরাসরি না করতে পারিনা । হয়ে গেলাম রাজি আর খেয়ে গেলাম ধরা !
নিজের উপর থেকে চাপ যত কমানো যায় এই ভেবে সেই অফিস গিয়ে শিলিগুড়ি থেকে প্যাকেজ ট্যুর নিলাম । আমার প্যাকেজ ট্যুর কে একদম প্যাকেট করে দিল দাদাবাবুরা ।
গুগলের এত ঘাটাঘাটি আর এনালাইসিস এক মিনিটে বোল্ড করে দিল দাদারা । ভয় দেখিয়ে বলল, দাদা, এই রাংপো চেকপোস্ট না অনেক ঝামেলার , আপনি এই বিবি বাচ্চা নিয়ে পারবেন না , বুঝছেন? এক দম সব শেষ হয়ে যাবে । আমাদের ড্রাইভার ভাই আপনাদের সব সেট করে দিবে ? বুঝছেন?
যাওয়ার সময় যে ট্যাক্সি দিল সে ড্রাইভার ভাই কনফার্ম রাত্রে বউ এর সাথে ঝগড়া করে ঘুমিয়েছে । তার ডিপ্রেশন দেখে মনে হয়েছে যে কোন সময় সে গাড়ি নিয়ে পাহাড় থেকে জাম্প দিবে । তবে পাহাড় থেকে জাম্প দেয়া ছাড়া এই ট্যাক্সি আবার কোথাও থামবে না। তিস্তা নদীর উপর সুন্দর একটা ব্রিজ দেখে শুধু পা ধরা বাকি রাখলাম, গাড়ি টা একটু থামানোর জন্য । লাভ হয়নি । না মানে না । ভেবেছিলাম শেষমেস গাড়ির স্টিয়ারিং ছেড়ে বলবে , যা নাসিফ যা, জিলে তেরি জিন্দেগি !
এমনি করে ল্যাংচাইতে ল্যাংচাইতে চলে এলাম সিকিম এর রাজধানি গ্যাংটক । প্যাকেজ এ বলে দিয়েছে হোটেল শহর থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার বাইরে । গিয়ে দেখি কমসে কম ৩ কিলো বাইরে । যদিও হোটেলের ভিউ সুন্দর ছিল কিন্তু কেমন যানি ভ্যাপসা একটা ভাব । সাফোকেশন হয় । বিছানায় ছারপোকার মত কাল কাল পোকা । এই ঠান্ডায় গিজার ছাড়ে না । কমপ্লেন করে উলটা ঝাড়ি খেলাম । মনে হল বাংলাদেশি হলে উনারা খুব একটা পাত্তা দেন না । জানেন যে আমাদের আসলে যাওয়ার কোন জায়গা নেই ।
তবে পরের দিন সকালে একটু ভাল লাগল । ভাল লাগার কারন হচ্ছে, শুধু আমি না , আমার মত আরও একজন ধরা খেয়েছে তবে ইন্ডীয়ান । রাগে উনিও গজগজ করছিল । আমি ভেবেছিলাম বাশ শুধু দাদারা আমাদের বাংলাদেশি টুরিস্টকেই দেন , এখন দেখলাম না , বাদ যাবে না একটি শিশুও !
পরের দিন আমরা গেলাম লাচুং এ । সুমো গাড়িতে । বলেছিল ৩ বেলা খাবার দিল । ৩ বেলা দিল ঠিক ই তবে ভাত-আলুর ঝোল আর ডিম । সাথে বিশেষ আকর্ষণ একটা কাচা মরিচ । ও সাথে আঁচার ও ছিল । সকালের নাস্তা দুই পিস ব্রেড আর জেলি । নিজেকে ধন্য মনে হল খেয়ে । এটলিস্ট খাবার তো দিয়েছে ! যেভাবে দিন যাচ্ছে ভেবেছিলাম শেষের দিকে না খাইয়ে রাখবে । লিবিয়া থেকে ইতালিতে যারা নৌকা করে যায় তাদের মত । এরা এত খারাপ না । তাদের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল অনেক ।
ফেরার পথে আমাদের রিজার্ভ ট্যাক্সি দেয়ার কথা থাকলেও দিল শেয়ারড সুমো গাড়ী । তাও সেই গাড়ি নিজে নিজেই ঠিক করে নিতে হয়েছে । যার থেকে প্যাকেজ নিয়েছেলাম উনাকে ফোন দিলাম । উনি যাচ্ছে তাই ব্যবহার করলেন । কিছুই বলার নেই । কিছুই করার নেই । সহ্য করতে হবে । কারন এটা আমার দেশ না । প্রতারিত হলেও কিছু করার নেই । তবে সিকিম পুলিশকে বিষয়টা জানিয়েছিলাম । তারা বলল, শিলিগুড়ি বা কলকাতা থেকে যারা প্যাকেজ নিয়ে আসে তারা প্রায় সবাই ধরা খায় । সবচাইতে ভাল সিকিম থেকেই প্যাকেজ নেয়া । যাই হোক শিক্ষা হয়ে গেল একটা ।
আপনারা যদি এই পোষ্ট পড়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনারা ওয়েস্ট বেঙ্গল থেকে প্যাকেজ নিবেন না । কারন এখানে প্যাকেজ কম বেশি সবি ফ্রড । সিকিমের যত মানুষের সাথে দেখা হয়েছে সবাই একি কথা বলেছে । প্রয়োজনে নিজে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সিকিম চলে যান এবং তারপর প্যাকেজ নেন । তাহলেও ভাল সারভিস পাবেন । সিকিম থেকে প্যাকেজ না নিয়ে আপনি আবার বেশি দূর যেতেও পারবেন না , কারন গাইড ও রুট পারমিট ছাড়া এসব এলাকায় যাওয়ার অনুমতি ভারত সরকার বিদেশিদের দেয় না ।
যাই হোক আশা করি আমার এই পোস্ট আপনাদের উপকারে আসবে । কারন আমিও চাইনা আমার মত এভাবে যাতে আপনারা প্রতারিত হন ।
নইলে আমার ঘুরবেন আর পস্তাইবেন । পস্তাইবেন আর ঘুরবেন । ধন্যবাদ
0 মন্তব্যসমূহ