সিলেটের অফবিট স্পট "শমসেরনগর", ট্যুরের বিস্তারিত !

 সত্যি বলতে আমাদের দেশে ভ্রমনের পরিচিত জায়গা খুব সংক্ষিপ্ত । ঘুরে ফিরে মানুষ কয়েকটা স্থানকেই প্রাধান্য দেয় বেশি , যেমন কক্সবাজার , সিলেট, বান্দরবান, শ্রীমঙ্গল , সুন্দরবন । এর বাইরেও কিন্তু বাংলাদেশে অনেক সুন্দর কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে গেলে আপনার খুব সুন্দর কিছু সময় কাটতে পারে । এরকম একটি জায়গা হচ্ছে শমসেরনগর । এখানের রয়েছে সুন্দর প্রাকৃতিক বিচিত্রতা যেটা আপনার ভ্রমন অভিজ্ঞতাকে করবে আরও বেশি সমৃদ্ধ ।


শমসেরগর কোথায় অবস্থিত?


শমসেরনগরের অবস্থান সিলেট এর মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাতা । তবে এ এলাকার আলাদা একটী স্বকীয়তা রয়েছে কারন এখানে রয়েছে একটি ব্রিটিশ সময়ের নির্মিত রেলস্টেশন । একটি এলাকার সমৃদ্ধির জন্য ট্রেন স্টেশন অনেক বড় একটি বিষয় । সিলেট থেকে এই জায়গার দূরত্ব ৬৬ কিলোমিটার আর ঢাকা থেকে ১৯২ কিলোমিটার । ঢাকা , সিলেট , চট্রগ্রাম সব জায়গা থেকেই ট্রেনে আসা যায় এখানে ।

Shamsher nagar tour spot



কি আছে এখানে?


শমসেরনগর ভারতের সীমান্তবর্তী একটি চা বাগান বেস্টিত এলাকা , এখানে রয়েছেঃ


  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত বিমানবন্দর ও বিমানঘাটী

  • চা বাগান

  • গলফ এর মাঠ

  • ক্যামেলিয়া লেক

  • ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হাসপাতাল

  • কাঠের ব্রিজ  

চলুন একে একে জেনে নেই এই স্থানগুলো সম্পরকে এবং কিভাবে যাবেন?


শমসেরনগর বিমানবন্দরঃ


সময়টা ১৯৪৫ সাল, শমসেরনগর বিমানবন্দর তখন ব্রিটিশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাটি । এখান থেকেই চীনে আসা যাওয়া করে প্লেন । সে বছর ১১ মার্চ এখান থেকে ছেড়ে যাওয়া এক বিমান হারিয়ে যায় উড্ডয়নের পর । এই বিমানবন্দরটি এখন আর বানিজ্যিক ভাবে ব্যাবহার হয় না । এটি শমসেরনগর স্টেশনের একদম কাছে এবং আপনি চাইলে হেটেই এখানে চলে যেতে পারেন । যদিও এখানের প্রবেশের অনুমতি নাও পেতে পারেন , তবে বাইরে থেকে অনেকাংশেই দেখা যায় । 


১৯৭০ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এর একটি ফেন্ডশিপ প্লেন এখানে বিদ্ধস্ত হয় । আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও এই ঘাটির ছিল অপরিসীম গুরুত্ব । যুদ্ধের সময় বিমান বাহিনীর প্রথম ঘাটি ছিল এটি ।



চা বাগানঃ


শমসেরনগরে অনেকগুলো চা বাগান রয়েছে । এই চা বাগানের ভিতর দিয়ে পাহাড়ি রাস্তা আপনাকে মুগ্ধ করবে । এই বাগানগুলো অনেক পুরাতন এবং এখানের চা বাগানের মানুষের সহজ জীবন ধারন আপনাকে বিস্মিত করবে ।  এই চা বাগান গুলোর মধ্যে ক্যামেলিয়া চা বাগান বিখ্যাত ।  রাস্তা থেকেই দেখতে পারবেন চা পাতা তুলা এবং সেগুলো বহন করার অপরুপ সব দৃশ্য । তবে এসব এলাকায় চা কর্মী দের ছবি তুলা বা ভিডিও করার আগে তাদের পারমিশন নিয়ে নিবেন, অনেক সময় এগুলো নিয়ে বাক বিতন্ডা ঘটে


গলফ এর মাঠ


ক্যামেলিয়া চা বাগানের পাশেই রয়েছে পরিত্যাক্ত সুন্দর একটি গলফ এর মাঠ । এর উচু নিচু ঢেউ তুলা সবুজ কার্পেটের মত ঘাস এ হেটে বেড়ানো আপনার জন্য হবে দারুন এক অভিজ্ঞতা । এখানে আগে প্রবেশ করা খুব সহজ ছিল কিন্তু এখন স্থানিয়দের সিন্ডিকেট এ দখলদারি চলায় ট্যুরিস্টদের ৫০-১০০ টাকা চাঁদা বা বখশিস দিতে হয় । না হলে স্থানীয়দের তোপের মুখে পরতে হয় ।  এখানে রয়েছে বিশাল একটি বটগাছ । খোলা মাঠে চাবাগানের পাশে এমন বটগাছে দৃশ্য খুবই চমৎকার । শমসেরনগর স্টেশন থেকে ক্যামেলিয়া টী গার্ডেন যাওয়ার পথেই পরবে এই মাঠ । এটী স্টেশন থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।


ক্যামেলিয়া লেকঃ


শমসেরনগরের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটী হচ্ছে ক্যামেলিয়া চা বাগানের লেক । চারিদিকে চা বাগানের ভিতর এই লেক মনোমুগ্ধকর । এখানে সকালে ফুটে শাপলা ফুল । নিরিবিলি এই লেকের পারে আসলে হটাত করেই মনে হতে পারে আপনিই পৃথিবীর সবচাইতে সুখি মানুষ ! এই লেক এ যাওয়ার রাস্তাটাও খুব সুন্দর । শমসেরনগর আসলে এই ক্যামেলিয়া লেক হচ্ছে মাস্ট সি একটা অপশন । স্টেশন থেকে এই লেক প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।


ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হাসপাতালঃ


ক্যামেলিয়া লেক এর পাশেই রয়েছে আসামিজ স্টাইলে তৈরি ব্রিটিশ স্থাপনার হাসপাতাল । এর নাম ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতাল । এই হাসপাতাল আপনাকে পুরাতন দিনের হাসপাতালের স্মৃতি মনে করিয়ে দিবে । এর স্থাপনাশৈলী ও খুব সুন্দর । চা বাগান এর মাঝখানে এরকম একটা নির্মাণশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য !


কাঠের ব্রিজঃ 


গলফ মাঠের পাশেই ছোট সুন্দর একটি কাঠের ব্রিজ রয়েছে , যেটাকে সবাই ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ নামেই ডাকেন । শমসেরনগরের সবগুলো স্থান দেখার পর সময় থাকলে আপনি এই ব্রিজ থেকে ঘুরে আসতে পারেন , ভাল হবে যদি আপনি গলফ মাঠ ঘুরে দেখার সময়টাইতে এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন ।


কোথায় খাবেন ? কোথায় থাকবেন?


শমসেরনগরের ভাল সব রেস্টুরেন্ট স্টেশনের আশেপাশেই অবস্থিত । তাই যাত্রা শুরুর আগে অথবা শেষে আপনাকে খাওয়াদাওয়া করতে হবে । থাকার জন্য এখানে রয়েছে সুন্দর কিছু রিসোর্ট । এর মধ্যে অন্যতম সুইস ভ্যালি রিসোর্ট । এই রিসোর্ট এ থেকেই আপনি এসব জায়গা ঘুরে দেখে নিতে পারেন?


কিভাবে ঘুরব?


shamshernagar Travel map
ছবিঃ শমশেরনগর এক স্থান থেকে আরেক স্থান যাওয়ার ম্যাপ



আপনি সিএনজি অথবা চান্দের গাড়ি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন । সি এন জি নিয়ে সব প্লেস ঘুরতে আপনার ৪০০-৭০০ টাকা খরচ হতে পারে সময় ঘন্টা অনুযায়ী । স্টেশনের পাশেই সিএনজি এবং চান্দের গাড়ী পাবেন ।


শমসেরনগর কিভাবে আসব?

এই রিসোর্ট এ যাওয়ার সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম বা কুমিল্লা এসব এলাকা থেকেই ট্রেনে করে সহজে চলে আসতে পারবেন । কারন এই রিসোর্ট এর পাশে দুটী স্টেশন রয়েছে । ১) শমসেরনগর স্টেশন , যেটি ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং ভানুগাছ স্টেশন যেটি ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এই দুইটি স্টেশনের যে কোন একটীতে ঢাকা অথবা চট্রগ্রামের সাথে সিলেট যাওয়া আসার সব ট্রেন থামে । তাই এখানে নেমে একটি সিএনজি অটো রিকশা নিয়ে সহজেই চলে আসতে পারবেন ।

যদি বাসে আসেন তবে শ্রীমঙ্গল বা কমলগঞ্জ এর বাসে আসলে দ্রুত আসতে পারবেন । তবে ট্রেনে আসাটাই সবচাইতে সহজ । যদি সিলেট থেকে আসেন তবে কালনি এক্সপ্রেস , পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস বা জয়ন্তিকাতে আসলে দুপুরের ভেতরে চলে আসতে পারবেন । যদি ঢাকা থেকে আসেন তবে সবচাইতে ভাল পারাবত এক্সপ্রেস , চট্রগ্রাম অথবা কুমিল্লা থেকে আসলে পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস ভাল হবে । খুলনা বা দক্ষিনবংগ থেকে আসলে শ্রিমংগল এর সরাসরি বাস ভাল । 

শমসেরনগর নিয়ে রয়েছে আমার একটি ইউটিউব ভিডিও , দেখার আমন্ত্রন রইল !




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ