শান্তি বাড়ি ইকো রিসোর্ট , শ্রীমঙ্গল । কেমন ছিল অভিজ্ঞতা ?

শ্রিমংগল , চায়ের রাজধানি । বাংলাদেশে যে কয়েকটি প্রসিদ্ধ ট্যুর স্পট রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম । শ্রিমংগলের মধ্যে এমন কিছু আছে যার আর কোথাও নেই । শ্রিমংগল এ ট্রাভেল করার সময় বর্তমান সময়ের ট্যুরিস্টরা হোটেলের পরিবর্তে রিসোর্টকে প্রাধান্য দেন বেশি । কারনটা সহজ । রিসোর্ট এ থাকলে এখানকার পরিবেশ আরেকটু ভালভাবে উপোভোগ করা যায় । 

যেহেতু সময়টা নাগরিক ক্লান্তি থেকে মুক্তি নেয়ার তাই প্রাকৃতিক পরিবেশের রিসোর্ট গুলো থাকে পছন্দের শীর্ষে । আর একারনেই সম্ভবত অন্যন্য শান্তিবাড়ি ইকো রিসোর্ট ।

কিভাবে যাবেন?

এই রিসোর্ট টি শ্রীমংগল  শহর থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । স্টেশন থেকে অটোরিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে যাত্রা করলে ১৫-২০ মিনিট লাগবে পৌছাতে । শহর বা স্টেশন থেকেই চোখে পড়বে দুইপাশের সুন্দর সব চা বাগান । বিখ্যাত গ্র্যান্ড সুলতান হোটেলের পাশ দিয়ে আপনাকে এখানে যেতে হবে ।

গুগল ম্যাপ লোকেশনঃ ক্লিক করুন 

কেন অনন্য?

শান্তি বাড়ি ইকো রিসোর্ট অনেকটা পাহাড়ি গ্রামের বাড়ি গুলোর আদলে করা হয়েছে । এখানে নানান ধরনের কটেজ রয়েছে , যেগুলোতে ২-১০ মানুষ একি সাথে এক রুমে থাকতে পারবে । রিসোর্ট এ যাওয়ার পথেই চোখে পড়বে গাছ গাছালি , ছোট খাল , গ্রামিন প্রাকৃতিক পরিবেশ আর ঝিরি । সেই পথ ধরে এগিয়ে রাস্তা থেকে ৫ মিনিট হেটে আপনাকে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে ।এই রিসোর্ট এ সুন্দর একটি পুকুর রয়েছে এবং আশেপাশের পরিবেশ খুব শান্ত । মনে হবে আপনি ফিরে এসেছেন শৈশব এ ফেলে আসা গ্রামের নানাবাড়ি বা দাদাবাড়ীতে । রয়েছে দলবল নিয়ে ফুটবল খেলার ব্যবস্থা । বাচ্চারা খুব আনন্দ পাবে এমন ঘাসের মাঠে দৌড় ঝাপ করতে ।

এখানকার বেশিরভাগ কটেজ গুলো দোতালা মাচান টাইপের । এগুলোর বারান্দা বা জানালা দিয়ে খুব সুন্দর বাইরের পরিবেশ দেখা যায় । রাতে হাটাহাটি করার জন্য রয়েছে জায়গা । আর শ্রিমঙ্গল এর বেশিরভাগ সুন্দর স্পটগুলো এই রিসোর্ট থেকে খুব সহজেই ঘুরে দেখা যায় । যেটা এই রিসোর্টকে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে ।

খরচ কেমন?

আমরা ৪ জন জনপ্রতি ১৪০০ টাকা করে প্যাকেজ নিয়েছিলাম যার মধ্যে ছিল সকালের নাস্তা আর রাতের বারবিকিউ সাথে কটেজ । চাইলে দুপুরের খাবার ও নিতে পারবেন তবে সে ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা বেশি লাগবে । ৪ জনে এই মিলিয়ে আমাদের দিতে হয়েছে ৫৮০০ টাকা । এটি ছিল মাচান টাইপের রুম । রুমে বিছানা ফ্লোরিং করা , দামি কোন আসবাব নেই । একেবারেই পাহাড়ি পরিবেশ । এটা একটা অন্যকম অভিজ্ঞতা । 

তবে ছোট পরিবার বা বড় গ্রুপ এর জন্য আলাদা আলাদা রুম রয়েছে । চাইলে ১০ জন একসাথে থাকতে পারবেন এমন রুম ও পাওয়া যাবে । রুম ভেদে এখানে ভাড়া ৩৫০০ টাকা থেকে ৭-৮ হাজার টাকা ভাড়া পড়বে । এসি রুমের ক্ষেত্রে যা আরেকটু বেশি ।

এখান থেকে কি কি দেখবেন?

শ্রীমঙ্গলে রয়েছে অনেক চা বাগান এবং বাংলাদেশের একমাত্র চা গবেষণা কেন্দ্র এখানেই অবস্থিত । সবাই একে বিটিআরআই নামে চেনে । রয়েছে মনোমুগ্ধকর দার্জিলিং টিলা সহ ছোট বড় সুন্দর সুন্দর সব চা বাগান । ঘুরে আসতে পারেন মাধবপুর লেক এবং বিখ্যাত লাউয়াছড়া উদ্যান । সন্ধ্যায় চলে যাবেন নিলকন্ঠ টি কেবিন যেখানে রয়েছে বাহারি সব চায়ের সমাহার । শ্রীমঙ্গল আপনাকে এমন এক প্রাকৃতিক ফিল দিবে যা বাংলাদেশের আর কোথাও পাওয়া যায় না । এছাড়াও রয়েছে নুরজাহান টি গারডেন । এখানে একটি স্ট্যাচু রয়েছে, শ্রীমঙ্গল ঘুরতে গেলে ট্যুরিস্টরা এখানে ছবি তুলতে পছন্দ করেন ।

এছাড়াও ট্রেকিং করার মত আশেপাশে অনেক জায়গা আছে কিন্তু সাধারনত পরিবার নিয়ে গেলে মানুষ এসব স্থানকেই প্রাধান্য দেয় বেশি ।  

কেমন ছিল পরিচ্ছন্নতা?

তবে এই রিসোর্ট এর পরিচ্ছন্নতা আরেকটু ভাল হওয়া উচিত ছিল । আমাদের রুম এর পর্দা এবং ব্লাংকেট পরিষ্কার ছিল না । একটু জংলি পরিবেশ হওয়াতে মশার অনেক অত্যাচার ছিল তবে কয়েল বা মশারি টানিয়ে নিলে ভয় কম । আসলে এমন গ্রামিন পরিবেশে থাকতে চাইলে কিছু সমস্যা তো  সহ্য করতেই হবে । ওয়াশরুমের ফ্যাসিলিটি ও আরেকটু ভাল হওয়া উচিত আমার মনে হয়টা?

আমরা পরেরদিন এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি , তারা ক্ষমাপ্রারথনা করেন এবং বলেন যে তাদেরকে সাথে সাথে বললেই তারা চেঞ্জ করে দিত । আমরা বলি যে পরবর্তীতে এ ব্যাপারে আরেকটু সতর্ক থাকার জন্য ।

রাতের খাবার

রাতে এখানে চিকেন বারবিকিউ করা হয় , এর স্বাদ ছিল অসাধারন । বার বি কিউ এর সাথে আনারস দেয়া হয়েছিল , এর আগে আমি কখনো চিকেন বারবিকিউ এর সাথে আনারস দেখিনি ।

বাড়তি সতর্কতাঃ

যেহেতু এই রিসোর্ট একটি গ্রামিন পরিবেশে তাই পোকামাকর এর ব্যাপারে সাবধানে থাকবেন বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে । প্রয়োযনে মশার জন্য রিপেলেন্ট ক্রিম গুলো সাথে রাখতে পারেন ।

ঢাকা থেকে কখন আসবেন?

যেহেতু চেক ইনের সময় দুপুরে তাই সকালে যদি আপনি পারাবত ট্রেনে আসেন অথবা সকালের বাসে আসেন তাহলে সহজেই দুপুরের আগে শ্রীমঙ্গল এ থাকতে পারবেন । পারাবত ঢাকা থেকে সকালে ছেড়ে আসে  । 

সিলেট থেকে কখন আসবেন?

সিলেট থেকে আসলে আপনি পাহাড়িকা বা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এ আসলে খুব সহজে চলে আসতে পারবেন । এছাড়া সারাদিন সিলেট - শ্রীমঙ্গল রুটে সারাদিন বাস তো রয়েছেই ।

এছাড়াও চট্রগ্রাম থেকে আসলে রাতের উদয়ন এক্সপ্রেস , খুলনা বা উত্তরবংগের অনেক বাস সন্ধায় ছেড়ে এসে সকালে শ্রিমংগল আসে যেমন মামুন এক্সপ্রেস । এগুলো দিয়ে আসলে আপনি সহজেই এখানে সময়মত থাকতে পারবেন ।

সব মিলিয়ে নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য অনেক ভাল একটি রিসোর্ট শান্তিবাড়ি ইকো রিসোর্ট । এই রিসোর্ট নিয়ে আমার একটি ইউটিইউব ভিডিও রয়েছে , দেখার আমন্ত্রন রইল । ধন্যবাদ । 

বুকিং নাম্বারঃ ০১৯৭৯১৮৯২৮৮

Check-in time: 1:00 PM
Check-out time: 11:00 AM

Website:ওয়েবসাইট লিংক

বুকিং ইমেইলঃ manager.tsbd@gmail.com

ইউটিউব ভিডিও এর লিঙ্ক