সেদিন কেন জানি তামিমের ছক্কা উঠছিল না। আর জয়া? ভাগ্যদেবি তাকে দু হাতে ছক্কা দিয়েছিলেন।
ছয় এক্কে ছয়
ছয় দুগুনে বারো
তিন ছয়ে আঠারো...
তামিনের জন্য মায়া হয়ে গেল জয়ার। ছেলেটা কি সাধারন একটা ছক্কাও উঠাতে পারেনা।
তাইতো মায়ার ছলে পাকা গুটি এগিয়ে দেয় তামিমের দিকে। তামিম সেদিন বুঝে গিয়েছিল, এই পাকা গুটি শুধু গুটি নয়, জয়ার ভালবাসা...
তামিম তাই গুটি খায়না।
একসময় জয়া সাহস করে চ্যাটবক্সে লিখে, তুমি কি আমাকে খাবে?
তামিম উত্তর দেয়না... এভাবেই এগিয়ে যায় খেলা। কেউ কাউকে স্পর্শ করেনা। এটাই বোধয় ভালবাসা।
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় এই প্রেম। জয়ার বাবা যখন গমগন হুংকারে জিজ্ঞেস করেন কি আছে ওই ছোকরার?
জয়া তার ওড়নায় মুখ চেপে অস্ফুট কন্ঠে জানায়, বাড়ি গাড়ি ধন দৌলত ওর কিচ্ছু নেই বাবা, শুধু আমি জানি ও আমাকে অনেক ভালোবাসে বাবা, ও আমার পাকা গুটি খায়না।
'খামোশ'
বিলিয়ার্ডর বোর্ড কাপানো বাবার একমাত্র মেয়ে হয়ে তুমি সামান্য এক লুডু খেলার ছেলেকে চাও?
আজই আমি আমার বন্ধুর ছেলে নীরব এর সাথে তোমার বিয়ে কথা আমি ফাইনাল করব। নীরব দাবার গ্র্যান্ডমাষ্টার।
'না বাবা না... ঘোড়া হাতির চাল আমি জানিনা বাবা, আমি শুধু ছক্কা না পাওয়া তামিমকে চাই....'
জয়ার বাবা এক চড়ে মেয়ের দুই গুটি, সরি, দাত ফেলে দিয়ে টান দিয়ে জয়ার ওয়াইফায়ার লাইন ছিড়ে দিলেন। অফলাইনে চলে গেল জয়া...
এদিকে তামিম ইনভাইট দিতে দিতে পাগল প্রায়। মোবাইল হাতে নিয়ে পাগলের মত গান গায়...
"নিথুয়া লুডুতে নেমেছি বন্ধুরে
এসো বন্ধু খেলার কেউ নাই,
ধরো বন্ধু আমার কেহ নাই..."
তারপর,
তারপর বিয়ে হয়ে যায় জয়ার, নীরবের সাথেই।
আর তামিম?
তামিম আর এখন লুডু খেলেনা। লুডু ডিলেট করে দিয়ে নামিয়েছে ষোল গুটি। একের পর এক গুটি খায় সবার। পাগলের মত।
এভাবেই কেটে যায় ১২ টি বছর।
হটাত একদিন পার্কে জয়ার সাথে দেখা হয়ে যায় দুজনার। সেই আগের মতই আছে জয়া।
দুরু দুরু বুকে কাছে এগিয়ে যায় তানিম।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, তোমার কি এখনো আগের মত ছক্কা উঠে??
0 মন্তব্যসমূহ