সাদা পাথর বা ভোলাগঞ্জ যেতে চাচ্ছেন? জেনে নিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়...

বর্তমানে বাংলাদেশের  অন্যতম শীর্ষ ট্যুর স্পট সাদাপাথর । যেটির আসল নাম ভোলাগঞ্জ । অনেকেই বলেন বাংলাদেশের কাশ্মির । এই ট্যুরস্পট ঘুরে দেখার আগে জেনে নিতে পারেন এ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা আপনার অবশ্যই কাজে দিবে ।


        


১. সিলেট থেকে সাদাপাথর বা ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত যাওয়ার অনেক গুলো যানবাহন রয়েছে । তবে এই রুটের রাস্তা ভাল থাকায় সবচাইতে কম খরচে যেতে পারেন যদি আপনি বিআরটিসির দোতালা বাসে করে যেতে পারেন । বাসের একদম সামনে বসতে পারলে উপোভোগ করতে পারবেন দুই ধারের চা বাগান, এয়ারপোর্ট এর দৃশ্য । এছাড়াও যেতে পারেন ট্যুরিস্ট বাসে কিংবা লোকাল সিএনজি দিয়ে । এগুলোর খরচ ৭৫ টাকা থেকে শুরু করে ১২০-১৩০ টাকা পর্যন্ত ।


কিন্তু এভাবে গেলে আপনি যদি পথে চা বাগান অথবা রাতারগুল দেখতে চান তাহলে কিন্তু সমস্যা , তাই পরিবার বা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ট্রাভেল করলে প্রাইভেট কার বা সিএনজি নিতে পারেন । ২ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যেই এগুলো পেয়ে যাবেন । চাইলে সিলেট থেকেই গাড়ি বুক করে যেতে পারেন । সিলেটে অনলাইনে গাড়ি বুক করার এখন অনেক সাইট রয়েছে যেমনঃ ট্যুর সিলেট ।


২. সাদাপাথরের নৌকাতে একসাথে ৮ জনের বেশি উঠতে দেয়না, তাই  ৯-১০ জন হলে সমস্যা । এক্ষেত্রে দুই নৌকা না নিয়ে বাড়তি লোক অন্য একটি নৌকার সাথে শেয়ারে যেতে পারেন । এক্ষেত্রে ঘাটের নেমে নৌকার মাঝির সাথে কথা বললেই তারা ব্যবস্থা করে দেয় । ফেরার সময় আবার ৮ জনের বেশি আসলেও সমস্যা হয় না। মাঝিকে ম্যানেজ করে নিতে হয়।


আবার যারা সোলো বা দুই তিন জন যাবেন তারাও চাইলে একি ভাবে শেয়ার করে চলে যেতে পারেন । তবে এক্ষেত্রে অন্য যাত্রিদের সাথে আগে থেকেই কথা বলে পরে নৌকা রিজার্ভ করতে পারলে বিড়ম্বনা কম ।


৩. যাওয়ার আগেই পানির বোতল বা শুকনা খাবার কিনে নিয়ে যেতে পারলে ভাল । কারন মুল স্পটে এগুলোর দাম অনেক বেশি। তবে খেয়াল রাখবেন এসব পানি বা চিপস এর বোতল যত্র তত্র না ফেলে যাতে আপনি ডাস্টবিনে ফেলতে পারেন । আমাদের সুন্দর পর্যটন স্পটগুলোকে আমরা আরও সুন্দর করে রাখি ।


৪. সবসময় সাথে গোসলের প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন । অনেকেই ভেবে যান , না স্পটে গিয়ে গোসল করব না । কিন্তু শিতল পরিষ্কার পানির প্রবাহ দেখে বেশিরভাগ লোকই লোভ সামলাতে পারেন না তাই পানি দেখটা দিয়ে পরেন, তাই প্রস্তুতি না থাকলে বিপদে পরতে হয়। তাই সাথে এক জোড়া সেন্ডেল ( যে গুলো ভিজলেও সমস্যা হয় না ) বাড়তি কাপর , মোবাইল রাখার পলিথিন এবং গামছা সাথে রাখতে পারেন ।


৫. মুল স্পটে লকারের সুবিধা রয়েছে । যা ভাড়া নেয়া যায় । তাই কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে রেখে আপনি নিশ্চিন্তে ভ্রমন করতে পারেন ।


৬. যদি কোলাহল থেকে একটু দূরে যেতে চান তবে মুল স্পট ধরে একটু আশেপাশে গেলেই নিরিবিলি পরিবেশে উপভোগ করতে পারবেন । এটি অনেক বড় জায়গা নিয়ে অবস্থিত এবং একদম ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা , হাটতে হাটতে হটাত করেই দেখতে পারেন আপনার এনড্রয়েড স্মার্ট ফোনের সময় চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে কারন আপনার ফোন ধরে নিয়েছে আপনি এখন ভারতে আছেন ।


৭. বাস পারকিং এর স্থানেই খাওয়ার দাওয়ার ভাল ব্যবস্থা রয়েছে । তবে মশলার পরিমান বেশি এটা মাথায় রাখবেন। এখানে খাবার দাবার নরমাল । যাদের হাইজেন ইস্যুতে সমস্যা আছে বা একটি আধুনিক খাবার চান তারা এখানে এগুলো পাবেন না বললেই চলে । এছাড়াও যাত্রাপথে অনেক খাবারের দোকান রয়েছে ।


৮. স্থানিয়দের সাথে কখনই তর্কে জড়াবেন না । তাদের সাথে ভাল ব্যাবহার করবেন । এবং উগ্র নারীদের পোশাক নির্বাচনে সতর্ক থাকা ভাল । নৌকার মাঝি বা এধরনের কারো সাথে তর্ক বিতর্ক আপনার জন্য নেগেটিভ হতে পারে ।


৯. অতি উৎসাহে সীমান্ত পার হওার চেস্টা করবেন না। বিজিবি এর নিরদেশনা সবসময় মেনে চলার চেষ্টা করুন ।


১০. সাদাপাথরের পানির নিচের পাথর অনেক পিচ্ছিল । তাই পরে গেলে ব্যাথা পাওার সম্ভাবনা যেমন থাকে তেমনি , সাথে পকেটের ফোন বা ঘড়ির ক্ষতি হতে পারে। ফোন যদি ওয়াটারপ্রুফ পলিতে রাখতে পারেন তাহলে সবচাইতে ভাল । অধিক স্রোতের সময় পানিতে বেশিদুর যাবেন না ।


১১. সাথে অবশ্যই খালি ব্যাগ নিয়ে যাবেন, কিছু পলিব্যাগ থাকলে অবশ্যই ভাল হয়।


১২. নৌকা ছড়াও সড়ক পথে ভোলাগঞ্জ থেকে মোটরবাইকে সাদাপাথর যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছ । তবে এক্ষেত্রে আগে রুটটা জেনে নিবেন । সোলো ট্রাভেলাররা চাইলে এভাবে যেতে পারেন ।


১৩. ভোলাগঞ্জ থেকে একটু আগে ২ঃ৩০-৩ঃ০০ টায় বের হতে পারলে উপভোগ করতে পারবেন মালনিছড়া চা বাগানের সৌন্দর্য । বেশিরভাগ পর্যটক দেরি করে ফিরেন বলে তা উপভোগ করতে পারেন কম । আবার চাইলে আপনি শুরুতেই এই বাগান দেখে যেতে পারেন ।


১৪. যারা ফ্লাইটে আসেন তারা চাইলে সকালের ফ্লাইটে নামলে সেখান থেকেই সরাসরি সাদাপাথর চলে যেতে পারেন এতে আপনার সময় বাচবে । ফ্লাইট থেকে নেমে আবার শহরে গিয়ে ফিরত আসতে প্রায় ঘন্টা খানেক সময় নষ্ট হতে পারে ।


১৫. সাদাপাথরে আশে পাশে এখনো তেমন আবাসিক ব্যাবস্থা বা থাকার হোটেল গড়ে উঠেনি তাই রাত্রিযাপনের জন্য শহরেই থাকা ভাল ।


১৬. প্রতিবছর এখানে গোসল করতে নেমে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে । তাদের বেশিরভাগেই বয়সে তরুন । তাই তরুনরা উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে এমন কোন কাজ করবেন না যাতে বিপদ ঘটতে পারে । এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকবেন ।


সবশেষ


পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কাজ করবেন না ।  চিপস, পানির বোতল এইগুলো ফেলবেন না । যদি সম্ভব হয় চোখের সামনে পরলে তা সরিয়ে ফেলবেন । কোন বিপদে পরলে আশেপাশের কাউকে ফোন দিতে পারবেন এমন নাম্বার লিখে রাখবেন ।


আর হ্যা, এমন কিছু করবেন না যাতে অন্য পর্যটকরা বিরক্ত হতে পারেন।


Youtube Video


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ