কাঞ্ছনজঙ্ঘা , বাংলাদেশ থেকে দেখতে পারা সবচাইতে বড় পর্বত । তেতুলিয়া থেকে এই পর্বতের দূরত্ব মাত্র ১২৫ কিলোমিটার । ভোরের আলোতে অনেকটা পরিস্কার দেখা যায় ভারতের সবচাইতে উচু এই পাহাড়কে । এটি ভারত-নেপাল সিমান্তে অবস্থিত ।
১. ১৮৫২ সাল পর্যন্ত ধারনা করা হত কাঞ্চনজংঘা পৃথিবীর সবচাইতে বড় পাহাড়। পরে হিসেব নিকেশ করে জানা যায় এটি আসলে পৃথিবির ৩য় বৃহত্তম পাহাড় এবং এভারেস্ট থেকে এর সর্বোচ্চশৃংগ মাত্র ৩০০ মিটার কম।
তাই বাংলাদেশ থেকে এভারেস্ট দেখার ডেমো স্বাদ নিতে পারেন কাঞ্চনজংঘা দেখে ! আবেগাপ্লুত হয়ে হেটেই রওনা দিবেন না । সামনেই সীমান্ত, কাঞ্ছনজংঘার পরিবর্তে জেলে থাকা লাগতে পারে অথবা বিএসএফ এর "ঠূশ"
২. বাংলাদেশ সীমান্ত থেক থেকে কাঞ্চনজংঘার দূরত্ব প্রায় ১২৫ কিলোমিটার, এই ধরুন ঢাকা শহর থেকে ময়মনসিংহ শহর, এর থেকে একটু বেশী । উফফ ! একটা এনা বাস যদি পাওয়া যেত কাঞ্চনজংঘার জন্য ! থাকলে শুনতে পারতেন "এই, ডাইরেক্ট কাঞ্ছন, ডাইরেক্ট কাঞ্ছন, গেইট লক!"
কপাল আর আবহাওয়া ভাল থাকলে উত্তরবংগের সিমান্ত এলাকা থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর এ দেখা যায় কাঞ্চনজংঘা।
৩. কাঞ্চনজংঘা প্রথম জয় করা হয় ১৯৫৫ সালে। 'জয় ব্রাউন' - 'জর্জ বান্ড' ছিলেন দুই আরোহী । সিকিমের ধর্মগুরুর বিশেষ অনুমতি নিয়ে তবেই রওনা দিয়েছিলেন তারা, আর শর্ত ছিল পাহাড়ের কোন মর্যাদাহানি করা যাবেনা । স্থানীয়দের ধর্মীয় মতে এই চূড়া অস্পর্শনীয় । অনেকেই মনে করেন, এটি দেবতাদের বাসস্থান । স্থানীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রথম পর্বত আরোহণ কারীরা চুড়ায় না উঠে একটু নিচে থেকেই আরোহণ সমাপ্ত করেন ।
এদিকে ১৯৮৬ সালে জেরজি কুকুচজকা এবং ক্রিজটোভ নামে দুই ভদ্রলোক শিতকালিন প্রথম আরোহণ করেন । সাহস আছে বলতে হবে। শীতে তো আমাদের গোসল করতেই করতে ভয় করে আর সেখানে বরফে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজংঘা ??
৪. কাঞ্চনজংঘার উচ্চতা ২৮,১৬৯ ফুট। পৃথিবীর উচ্চতম স্থাপনা বুরজ খলিফা ১৪৫০ মিটার । তার মানে বুরজ খলিফার চাইতেও প্রায় ২০ গুন বেশী ! ইয়ে, মানে, কাঞ্চনজংঘায় কিন্তু লিফট নেই । তাই রওনা দেয়ার আগে সাবধান ।
৫. কাঞ্চনজংঘা কিন্তু বাংলা সিনেমার ইলিয়াস কাঞ্চনের মতই মারকুটে! আর তাই শতকরা ২২ ভাগ পর্বতারোহি মারা যান এই পাহাড় জয় করতে গিয়ে !! তাইতো উনাকে ডাকা হয় "খুনি পর্বত"! এখানে আবহাওয়া চরম অনিশ্চিত এবং প্রায়ই তুষার ধ্বসের ঘটনা ঘটে ।
৬. স্থানীয়দের ধারনা অনুযায়ি, এখানে একটা ভয়ংকর দানব বাস করে । যাকে স্নো ম্যান বা কাঞ্ছনজংঘার দানব নামে ডাকা হয় । যদিও কোন পর্বত আরোহী এখন পরযন্ত এমন কিছুরই দেখা পাননি । পেলে এত দিনে ইন্সটাগ্রাম আর টিকটকে ভাইরাল হয়ে যেত এই দানব । আবার উলটা ভাবে চিন্তা করলেও হয় যারা দেখা পেয়েছে তার আর জীবনে ইন্সটাগ্রামে লগ ইন করার সুযোগই পায় নি ! অনেক অভিযাত্রি ট্রেকিং শুরু করে এই দানবের ভয়ে ট্রেক বাতিল করেছেন আবার অনেকেই দেখেছেন এর পায়ের ছাপ !
৭. তো কবে যাচ্ছেন কাঞ্চনজংঘা জয় করতে?? এখানকার বেজক্যাম্প ট্রেক কিন্তু খুবই জনপ্রিয় আর চলতে চলতে দেখতে পারবেন সুন্দর সুন্দর সব গ্রামীণ প্রাকৃতিক দৃশ্য । পাহাড় পর্যন্ত যেতে না পারলে চলে যাবেন তেতুলিয়া সীমান্তে । কারন গুনিজনরা বলেন, ঘ্রানেই অর্ধ ভোজন । তাহলে দেখায় অর্ধেক আরোহণ !
৮. প্রাচীন তিব্বতীয় বিশ্বাস অনুসারে এই পাহাড়ের নিচে রয়েছে এক শহর , যার নাম 'শাম্বালা' । এই শহরে অদৃশ্য সাধু ও সন্ন্যাসীরা বসবাস করেন এবং পৃথিবীর বিপদে সামনে এগিয়ে আসবেন ।
ইচ্ছা আছে কোন একদিন এই পাহাড়ের বেজক্যাম্প এ ট্রেকিং এ যাব, আপনার মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে, চুড়ায় নয় কেন? মাথা খারাপ? দানব যদি খেয়ে ফেলে? তাইলে ফিরে এসে অফিস করবে কে?
ভাল লাগলে পাশেই থাকবেন । ধন্যবাদ ।
0 মন্তব্যসমূহ