বাংলাদেশ থেকে যারা ডাউকি বর্ডার হয়ে মেঘালয় যেতে চাচ্ছেন এই পোস্টটি তাদের জন্য । এই পোস্ট থেকে আমরা জানব:
১. তামাবিল-ডাউকির বর্ডারের কিছু প্রয়জনিয় তথ্য ।
২. ডাউকি থেকে শিলং যেতে কি কি দেখবে?
৩. যাওয়ার পথে খাবারের ব্যবস্থা ।
৪. কি কি বিষয় সতর্ক থাকতে হবে?
৫. ভাড়া কেমন ? কম খরচে কিভাবে যাওয়া যাবে?
৬. ডুয়েল কারেন্সি কার্ড এর ব্যবহার।
৭. শিলং এর হোটেল । খরচ ও অবস্থান ।
৮. শপিং কিছু প্রয়জনিয় তথ্য ।
এছাড়াও আনুসাংগিক কিছু তথ্য থাকল পোস্ট এর বিভিন্ন অংশে ।
১. তামাবিল-ডাউকির বর্ডারের কিছু তথ্যঃ
বিশেষ কিছু দিন ছাড়া তামাবিল-ডাউকি বর্ডার সপ্তাহে ৭ দিনই খোলা থাকে । ইমিগ্রেশন এর জন্য বর্ডার ওপেন হয় সকাল ৯ টায়। সিলেট থেকে বাস-লেগুনা বা সিএনজি নিয়ে তামাবিল বর্ডার চলে যেতে পারবেন । বাসে ভাড়া নিতে পারে ১০০ টাকা । সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে গেলে ৮০০-১২০০ টাকা নিতে পারে ।
শুক্রবার ও শনিবার বা বন্ধের দিনে কি তামাবিল ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দেয়া যায়?
উত্তরঃ তামাবিল বর্ডারে আগে সোনালি ব্যাংক এর কোন ব্রাঞ্ছ ছিলনা । তবে এখন আছে । এই ব্রাঞ্চ গুলো বর্ডারের সাথে সমন্বয় করে প্রতিদিন ই খোলা থাকে । তবে সময় বাঁচাতে আগে থেকে ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে রাখলে আপনার সময় কিছুটা সাশ্রয় হবে । সিলেট শহরের জিন্দাবাজার সোনালি ব্যাংক এ ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দেয়া যায় । বাই রোড বর্তমান ট্রাভেল ট্যাক্স ১০০০ টাকা ।
দিনে দিনে কি ফিরে আসা যায়?
ডাউকি বর্ডার দিয়ে যাওয়ার পর আপনি দিনে দিনে ফিরে আসতে পারবেন তবে আপনাকে ৫ টার ভিতরে ফিরে আসতে হবে । তবে নুন্যতম ১ দিন থেকে আসাটা ভাল ।
রুপি নিয়ে কি যাওয়া যাবে?
রুপি নিয়ে যাওয়া অবৈধ । নির্দিষ্ট পরিমান বাংলাদেশি টাকা নিয়ে যেতে পারবেন, তবে ডলার নিয়ে যাওয়াটা সবচাইতে ভাল । ক্যাশ ডলার এন্ডরস করা থাকলে , ডলার দেখতে চায় অনেক সময় । বর্ডার পার হলেই ডাউকি বাজারে রুপি এক্সছেঞ্জ করে নিতে পারবেন । সাথে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড থাকলে অনেক সুবিধা পাবেন ।
বর্ডার পার হওয়ার জন্য আপনার ৩ টা বাপারে খেয়াল রাখতে হবে ।
১) ভিসা সহ পাসপোর্ট এবং ভিসার মেয়াদ।
২) ট্রাভেল ট্যাক্স।
৩) ডলার এন্ডোরসমেন্ট ।
ভারতিয় ইমিগ্রেশনে অনেক সময় করোনার সনদ দেখতে চায় ।
২. ডাউকি থেকে শিলং যেতে কি কি দেখব?
ডাউকি থেকে শিলং যেতে যেতে মেঘ-পাহাড়-ঝরনা, স্বচ্ছ নদি অনেক কিছু দেখতে পারবেন । সাথে দেখা যাবে পরিপাটি সুন্দর কিছু গ্রাম আর সবুজের সমারোহ ।
ডাউকি ব্রিজ ও উমগট নদিঃ আমরা যারা বাংলাদেশের জাফলং এ বেড়াতে যাই, তারা খুব কাছে থেকে ভারতের ডাউকি ব্রিজ দেখতে পাই । ডাউকি দিয়ে ভারত যাওয়ার সময় আপনাকে ডাউকি ব্রিজ পার হয়ে যেতে হবে । ডাউকি ব্রিজ ১৯৩২ সালে নির্মিত ভারতের একটি ব্রিটিশ স্থাপনা । ডাউকি নদীর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে উমগট নদি । যা ভারতের আসাম থেকে প্রবাহমান । বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর এটী প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়েছে ।
ক্যানিয়নঃ ডাউকি ব্রিজ পার হওয়ার পর প্রায় ঘন্টাখানেক রাস্তা আপনাকে উচুনিচু পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হবে তবে পাহাড়ী খাদ কম পাবেন । ঘন্টাখানেক পথ যাওয়ার পর আপনি বিশাল কিছু পাহাড়ী খাদ দেখতে পারবেন ।
ঝরনাঃ ডাউকি থেকে শিলং যাওয়ার পথে একটু পরপরই ঝর্না দেখা যায় । তবে বৃষ্টির দিনে ঝর্নাতে অনেক পানি থাকে কিন্তু বৃষ্টির সময় ছাড়া খুব বেশি বড় ঝর্না দেখা যায় না ।
লাইটলুম গ্র্যান্ড ক্যানিয়নঃ লাইটলুম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ডাউকি থেকে শিলং যাওয়ার পথে সরাসরি পরেনা তবে আপনি যদি ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে কথা বলে লাইটলুম হয়ে যান তাহলে যাওয়ার পথেই আপনি শিলং এর খুব সুন্দর একটি স্পট দেখে যেতে পারবেন তাই পরের দিনগুলোতে আপনার একটি স্পট এর জন্য সময় ও অর্থ বরাদ্দ দেয়ার প্রয়োজন নেই । লাইটলুমে দুপুরের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে । এখানে প্রবেশ করতে করতে হয়ত আপনার দুপুর হয়ে যাবে তাই । ডাউকি থেকে শিলং যাওয়ার পথে এখানে লাঞ্চ করে নিতে পারেন ।
৩. যাওয়ার পথে খাবারের ব্যবস্থা ।
শিলং যাওয়ার পথে অনেক ছোট ছোট খাবারে দোকান রয়েছে তবে এগুলো একটু কষ্টলি । আপনি যদি একেবারে শিলং অথবা লাইটলুম গিয়ে থাকলে সেখানে লাঞ্চ করতে পারেন তাহলে তা আপনার জন্য ভাল হবে ।
৪. কি কি বিষয় সতর্ক থাকতে হবে?
শিলং যাওয়ার পথে কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবেঃ
এখানে ১২ মাসই বৃষ্টি হয় , তাই সাথে সবসময় ছাতা অথবা রেইনকোট রাখবেন ।
শিলং খাসিয়া প্রধান অঞ্ছল , এখানে শূয়র এর মাংসের আধিক্য বেশি , তাই রেস্টুরেন্ট এ প্রবেশের সময় খেয়াল রাখবেন বাংলা বা মুসলিম খাবার আছে কিনা। সাথে সবসময় কিছু শুকনা খাবার রাখতে পারেন ।
শনিবার ও রবিবারে শিলং এর ভাল প্রায় সব হোটেল আগে থেকেই বুক থাকে । তাই শনিবার ও রবিবার ভ্রমনের ক্ষেত্রে আগে থেকে একটু জেনে গেলে ভাল হয় ।
বাড়তি টিপ্সঃ
শিলং ঘুরতে যে আপনাকে সবসময় ট্যাক্সি নিয়ে ঘুরতে হবে এমন কিন্তু না । এখানে বেশ কিছু ট্যুর অপারেটর আছে যারা ট্যুর বাস প্রভাইড করে থাকে । এদের সাথে যোগাযোগ করে কম খরচে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আসতে পারবেন ।
৫. ভাড়া কেমন ? কম খরচে কিভাবে যাওয়া যাবে?
ডাউকি থেকে শিলং এর ট্যাক্সি ভাড়া ২০০০-২৫০০ রুপি । তবে আপনি যদি সাথে অন্যান্য কিছু স্পট এড করে নেন তাহলে আরও ৫০০ থেকে ১০০০ রুপি যোগ হবে । যদি একদম কম খরচে যেতে চান তাহলে সেখানে কিছু সুমো গাড়ি থাকে যেগুল নিয়ে জনপ্রতি ৫০০ রুপিতে শিলং চলে যেতে পারবেন ।
৬. ডুয়েল কারেন্সি কার্ড এর ব্যবহার।
আপনার কাছে যদি বাংলাদেশি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড থাকে তবে তা এন্ডরস করে রাখবেন আপনার পাসপোর্টে । আপনি সেই কার্ড ব্যবহার করে ভারতের এটিএম বুথ গুলো থেকে রুপি তুলতে পারবেন । এতে কিছুটা সাশ্রুয় হয় । তবে প্রতিটা ট্রাঞ্জেকশন এ কিছু টাকা চার্জ করা হয় । তাই কম রুপি উত্তোলন এর চাইতে আপনি যদি একসাথে বেশি রুপি উত্তোলন করেন তাহলে আপনার খরচ কমে আসবে ।
৭. শিলং এর হোটেল । খরচ ও অবস্থান ।
শিলং এর বেশিরভাগ হোটেলই পুলিশ বাজারে অবস্থিত । সামনের দিকের হোটেলর মধ্যে রেইনবো, ব্লু পাইন এগুলো দেখা যায় । এগুলোতে রুম ভাড়া একটু বেশি । ভিতরের দিকে গেলে মসজিদের রোড এ বেশ কিছু হোটেল রয়েছে । হোটেল ভাড়া সাধারনত এই জায়গায় ১০০০ থেকে ৫০০০ রুপি পর্যন্ত । শনিবার ও রবিবারে হোটেল প্রায় সবগুলো বুকড থাকে । পুলিশ বাজারে অনেক হোটেল রয়েছে তাই একটু খুজে নিতে হবে আপনার বাজেটে পছন্দের হোটেল ।
৮. শপিং
শপিং এর জন্য বেশিরভাগ বড় ব্র্যান্ড ও শপিং মল পুলিশ বাজারেই পাওয়া যাবে । এখানে পুমা, এডীডাস এর মত বড় ব্র্যান্ড এর আউটলেট রয়েছে । এছাড়াও কসমেটিক্স ও অন্যান্য এক্সেসরিজ কিনার জন্য বেশ কিছু সস্তা দোকান রয়েছে । পাশাপাশি প্রচুর স্ট্রিট ফুডের অপশন আছে এখানে ।
আশা করছি পোস্টটি আপনার জন্য সহায়ক ছিল ।
0 মন্তব্যসমূহ