টি হেভেন রিসোর্ট - শ্রীমঙ্গল । কেমন ছিল ? । জেনে নিন সত্যিকারের রিভিউ !

 আজকের এই পোস্ট তাদের জন্য যারা শ্রীমঙ্গল এর টি হেভেন রিসোর্ট বুকিং করার কথা ভাবছেন বা বুকিং করে ফেলেছেন ।

টি হেভেন রিসোর্ট নাম শুনে হয়তো মনেরে মধ্যে ভেসে উঠবে চারপাশ চা বাগান বেষ্টিত এক রসোর্ট কিন্তু শুরুতেই আপনার ভুল ভাঙ্গিয়ে দিচ্ছি এই রিসোর্ট এর খুব কাছে কোন চা বাগান নেই ।  একদম পাশে যে চা বাগান আছে সেটাও প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে ।


যা হোক , রিসোর্ট বললেও এখান হোটেল ভাবটাই বেশি । যারা একটু নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশের কথা ভাবছেন তাদের জন্য বলছি এই রিসোর্ট শ্রিমংগল-ঢাকা হাইওয়ে একদম পাশে দাঁড়িয়ে । ৫ তালা এই রিসোর্ট এ রুমের পরিবেশটা ভালই ছিল , ফ্রেশরুমে গোসলের বাথটাব আছে । রুমের পাশে রয়েছে বারান্দা । বারান্দা থেকে একটু খোলামেলা পরিবেশ দেখা যায় ।


tea heaven resort



রুমে একটু বদ্ধ পরিবেশ এর স্মেল করছিল , উচিত ছিল রুম ফ্রেশনার ইউজ করা । কিন্তু দুরভাগ্যজনক ভাবে রুম সার্ভিস ডেকে এনে তারপর এয়ার ফ্রেশনার নিয়ে আসতে হয়েছে । ৩ জন থাকার মত একটা ডাবল বেড আর একটা সিংগেল বেডের এই রুমের জন্য আমাদের ভাড়া দিতে হয়েছে ৪০০০ টাকা । এটা উইকলি হলিডে শুক্রবারের রেট ।


রিসোর্ট এর পাশে রয়েছে বাচ্চাদের খেলার জন্য জায়গা আছে তবে ঘাস কাটা ছিল না । তাই বৃষ্টির দিনে স্বাভাবিক ভাবেই এখানে চলাচল করাটা একটু কঠিন হবে ।  


টিহেভেন বুকিং করার পেছনে আমাদের সবচাইতে বড় কারন ছিল সুইমিং পুল । কিন্তু দুরভাগ্যজনক ভাবে পুলের পানির রঙ ও পরিচ্ছন্নতা ভাল ছিল না । আমরা সবসময় পানির রঙ নীল দেখে অভ্যস্ত , ,কিন্তু এখানে পানির রঙ পেয়েছি সবুজ ।  রিসোর্ট মেনেজম্যান্ট এর বক্তব্য ছিল বৃষ্টির কারনে পানির রঙ এরকম হয়ে গিয়েছে । বৃষ্টি বেশি হলে শ্যাওলা জমে যায় । তবে এই অবস্থা দেখে আর সুইমিং করা হয়নি  । এই রিসোর্ট এ ৪ সপ্তাহ পরপর সুইমিং পুলের পানি বদল করা হয় । তবে শ্রীমঙ্গল যেহেতু বৃষ্টি প্রবন এলাকা তাই আসার আগে সুইমিং পুল এর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আসাটা ভাল হবে । না হলে আমার মত আশাহত হতে হবে । 


তবে সুইমিং পুলের যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবে এটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পরিবেশের সুইমিংপুল গুলোর মধ্যে একটি । এখানে বাচ্চাদের জন্য আলাদা পুলের ব্যাবস্থা রয়েছে এবং সেটাও বেশ বড় বলা যায় । সুইমিং পুলের পাশেই সময় কাটানোর জন্য সুন্দর ব্যাবস্থা রয়েছে এবং আপনি চাইলে মধ্যরাত পর্যন্ত বসে এখানে গল্প করতে পারবেন । 


বিকালে শ্রীমংগলের চা বাগান এ ঘুরাঘুরি করার পর আবার চলে এলাম রিসোর্ট এ । রাতে রিসোর্ট এ খাওয়ার অর্ডার দেয়া ছিল । কিন্তু খেতে বসে আরও একবার আশাহত হতে হল । রেস্টুরেন্ট এ ঢুকে অবাক হলাম কারন আজকে রাতের ডিনার এ আছি শুধু আমরাই । এর কারন অবশ্য একটু পরেই বুঝতে পারলাম । কারন খেয়ে মনে হল , এখানে খাবারের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি । আজকে আমাদের মেনু ছিল চিকেন - ভাত - ভর্তা । দুপুরে বাইরে একই মেন্যু দিয়ে খেয়েছিলাম কিন্তু এখন মন ভরল না । আর তাই খাওয়ার পর আবার কিছু খেতে হল , একদম ইউনিক একটা এক্সপেরিয়েন্স । এই রিসোর্ট এর থেকে দুই-তিন কিলোমিটার পরে দুই তিনটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে এখন মনে হচ্ছে সেখানে খেয়ে আসলেই ভাল করতাম ।


সকালে নাস্তা কমপ্লিমেন্টোরি , যেখানে ছিল পরোটা আর ডাল , সাথে চা । এখানে চায়ের টেস্ট ভাল লেগেছে । যেহেতু শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজধানি তাই এখানে চা টা ভাল হবে এটা অবশ্যই আশা করা যায়।


রিসোর্ট এর পাশে একটি পুকুর আছে যেখানে শাপলা ফুটে থাকে । যদিও আমরা ফুটন্ত শাপলা পাই নি , তবে একদম সকাল বেলা খুব নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য এটা একটা চমতকার জায়গা মনে হয়েছে আমার কাছে ।









tea heaven resort review


রিসোর্টটি শ্রিমংগল স্টেশন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । অটো নিয়ে আসলে ভাড়া পরবে ১০০ টাকা আর সিএনজিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ।


রিসোর্ট এর স্টাফদের সার্ভিস ভাল ছিল । বিশেষ করে সিকিউরিটি গার্ডরা অনেক আন্তরিক ছিলেন । সব মিলিয়ে শহর ছেড়ে শ্রিমংগল যে উদ্দ্যেশ্যে আসা সেটা এবার পুরোপুরি পুরন হলনা । টুরিস্টদের ট্যুর যাতে আরেকটু সুন্দর কাটে সেটা নিয়ে রিসোর্ট মেনেজমেন্টকে আরেকটু ভেবে দেখার অনুরোধ রইল । এগুলো নিয়ে হয়ত টুরিস্টদের সাথে আরেকটু কথা বলে নেয়া উচিত আর কি কি থাকলে ভাল হয় বা কিভাবে এই রিসোর্টকে আরেটু সুন্দর সময় কাটানোর মত গড়ে তুলা যায় । বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট ফেসিলিটি এবং ডিনারের ব্যাবস্থা কিভাবে আরেকটু সুন্দর করা যায় সেটা নিয়ে হয়ত তারা ভেবে দেখতে পারেন । 


কিভাবে যাবেন টি  হেভেন রিসোর্ট এঃ


যদি ট্রেনে আসতে চান , ঢাকা থেকে বেস্ট অপশন হবে পারাবত এক্সপ্রেস । সকালে রওনা করে চেক ইন টাইমের আগেই চলে আসতে পারবেন এখানে ।


সিলেট থেকে আসতে চাইলে সকালের কালনী এক্সপ্রেস অথবা পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস বেস্ট অপশন হবে । কালনি সিলেট থেকে ছেড়ে শ্রিমংগল থাকে সকাল সাড়ে আটটায় আর পাহাড়িকা থাকে একটায় 


আর চিটাগাং থেকে আসতে চাইলে রাতের উদয়ন অথবা পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস বেছে নিতে পারেন । তবে পাহাড়িকা তে আসলে আসতে আসতে দুপুর হয়ে যায় ।


বাসে আসতে চাইলে, ঢাকা - চট্রগ্রাম - সিলেট অথব কুমিল্লা এসব শহর থেকে সরাসরি বাস তো আছেই ।


যারা সরাসরি গাড়ী নিয়ে আসতে চান , তাদের গাড়ি রাখার জন্য পারকিং সুবিধা রয়েছে নিচে ।


মিটিং বা কনফারেন্স এর সুবিধাও আছে এই রিসোর্ট এ ।


রিসোর্ট এর কন্টাক্ট নাম্বারঃ 01708033544


চেক ইন টাইমঃ ১ টা ।

চেক আউট টাইমঃ ১২ টা ।


রিসোর্ট থেকে দিনে দিনে কি কি ঘুরে দেখতে পারবেনঃ রিসোর্ট থেকে দিনে দিনে কি কি ঘুরে দেখতে পারেন তার একটা ধারনা দিলাম নিচের লিস্ট এঃ


  • লাউয়াছড়া উদ্যান । 

  • সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা । 

  • নুরজাহান টি গার্ডেন ।

  • দার্জিলিং টিলা ।

  • বিটীআরআই ।

  • বদ্ধভুমি ।

আশা করছি পোস্টটি পড়ে আপনি টি হ্যাভেন রিসোর্ট সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পেয়েছেন । এই নিয়ে আমার ইউটিউব ভিডিও এর লিংক থাকল নিচে । আপনার ভ্রমন সুন্দর হোক এই কামনা করি । ধন্যবাদ । আর কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ