বান্দরবানে ১ দিনের সহজ ফ্যামিলি ট্যুর ।

অনেকেই ফ্যামিলি নিয়ে বান্দরবান আসতে ভয় পান এই ভেবে যে বান্দরবানের প্রতিটা স্পটই বোধয় গহীন পাহাড় আর আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথে।  আমি যখন প্রথম বান্দরবান যাই আমারও একি ধারনা ছিল । মজার বিষয় হচ্ছে বান্দরবানের সব স্পট কিন্তু গহিনে না । কিছু কিছু স্পট আছে যেগুলো শহরের একদম কাছে এবং আপনি চাইলে আপনার পরিবার নিয়ে খুব সহজে ঘুরে আসতে পারবেন ।

আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল ৭ জন । এর মধ্যে ছিল একদম ছোট শিশু, নারি , পুরুষ এমনকি বয়স্কা নারিও । মাত্র ২৪ ঘন্টার সফরে আমরা ঘুরে দেখি বান্দরবানের কিছু সুন্দর স্পট যেখানে আমাদের পরিবারের সদস্যদের কোন সমস্যা হয়নি ।





আমরা বান্দরবান এসেছিলাম মাত্র ২৪ ঘন্টার জন্য । তখন এখানে পাহাড়ীদের সাথে আর্মির ঝামেলা চলছিল । বান্দরবান শহরে প্রবেশের সময় সেনাবাহিনি আমাদের জানিয়ে দেয় বান্দরবানের খুব ভেতরে প্রবেশ না করার জন্য । তবে চাইলে আমরা নিলগিরি পর্যন্ত যেতে পারি । আমরা যেতে পারতাম তবে নিলগিরি না গিয়ে সবার কথা চিন্তা করে আমরা নিলাচল গেলাম বিকালে।


ভাল কথা, বান্দরবান সফরের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার আইডি কার্ড সাথে রাখবেন। সেনা সদস্যরা তা দেখতে চান।


নিলাচল বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিলো মিটার দূরে অবস্থিত এক পাহাড় । এটি বান্দরবান শহরের পাশে সবচাইতে উচু পাহাড় । এর উচ্চতা ১৬০০ ফুট । এই পাহাড় থেকে পুরো বান্দরবান শহর দেখা যায় । 


নিলাচল ভ্রমন


বান্দরবান থেকে নিলাচল যাওয়ার জন্য আপনাকে শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ভাড়া করতে হবে । ভাড়া নিবে ৮০০-১০০০ টাকা । তবে আপনি যদি সাথে মেঘলা পার্ক টী ঘুরে দেখতে চান তবে আপনাকে  আরো বাড়তি কিছু টাকা যোগ করতে হবে । মেঘলা পার্কে অনেক হাটতে হয় , তাই বয়স্ক কেউ সাথে থাকলে সরাসরি নিলাচলে চলে যাওয়াই ভাল ।


নিলাচলে প্রবেশের আগে পারকিং এর জন্য আপনাকে ১০০ টাকা পে করতে হবে । এছাড়া জনপ্রতি প্রবেশ মুল্য ৫০ টাকা । এখানে বিকালে বসে সময় কাটানোর জন্য দারুন কিছু ভিউপয়েন্ট আর বসার জায়গা রয়েছে । ভেতরে কিছু কটেজ আর খাবারের রেস্টূরেন্ট রয়েছে । রাতে থাকতে চাইলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে এসে এই রিজোরট এ থাকতে পারবেন । 


নিলাচল রিসোর্ট এর ফোন নাম্বারঃ 01551-444000 





কটেজ প্রতি আপনার খরচ পড়বে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা । এই রিসোর্ট গুলো থেকে সকালে যে ভিউ পাবেন তাতে আপনার পুরো টাকা উসুল হবে বলেই আমরা ধারনা করি । এখানে বসে গল্প করা বা চা খাওয়ার জন্য কিছু টি স্টল রয়েছে ।  সবচেয়ে উচু জায়গাতে তৈরি করা হয়েছে কিছু ভিউ পয়েন্ট । আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটেছিল বলে অনেক সুন্দর লাগছিল ।


আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে আপনি সমুদ্রও দেখতে পারবেন তবে এটী দেখতে পাওয়া খুব কস্টের ব্যাপার। এই পাহাড় থেকে খুব সুন্দর সূর্যাস্ত দেখা যায় । সূর্যাস্তের পর যখন অন্ধকার নেমে আসে তখন বান্দরবান শহরের লাইট জ্বলে উঠে । অনেক প্লেন থেকে কোন শহর যেভাবে দেখায় সেই দৃশ্যের মত ।


নিলাচল দেখতে অনেকটাই নিলগিরির মত । যদিও নিলগিরি অনেক সুন্দর ও উচুতে অবস্থিত । তবে নিলগিরি ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়া কস্টের এবং এটী শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । তাই যারা দূরে যেতে চান না কিন্তু পাহাড় দেখতে চান, তাদের জন্য নিলাচল বাংলাদেশের ভেতর বেস্ট অপশন ।


সন্ধ্যার পরে আমরা নেমে আসলাম পাহাড় থেকে আবার বান্দরবান শহরে । সন্ধ্যায় একটু রেস্ট নিয়ে শহর দেখতে বের হলাম । বান্দরবান শহর একসময় অনেক অপরিষ্কার থাকলেও এখন বেশ পরিষ্কার । মাস্ট সি অপশনে রাখতে পারেন সাঙ্গু ব্রিজকে । ব্রিজ পার হলেই বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট । 

 

এই হচ্ছে প্রথম দিনে অরধেক অংশের ভ্রমন । পরের অংশে আমরা যাচ্ছি শৈলপ্রপাত, শৈলপ্রপাত যেতে দেখে নিব মিলনছড়ী ভিউ পয়েন্ট । যেখান থেকে সাংগু নদি দেখা যায় । আপনার ভাগ্য ভাল থাকলে সাথে মেঘের দেখাও পেয়ে যাবে ন। ছবি তুলার দারুন জায়গা এটি ।


শৈলপ্রপাতঃ

ছোটবেলায় পড়েছিলাম মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। প্রচণ্ড গরমের দুপুরে যোখন হোটেল থেকে বের হয়, কে জানত এমন দৃশ্য অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।





পাহাড়ে বৃষ্টি আমার কাছে স্বপ্নের মত। সবুজ এর কত গুলো শড হয় সেটা বৃষ্টির দিনে পাহাড়েই দেখা যায়।


ফ্যামিলি ট্যুরে এসেছি বলে আমরা গাড়ি রিজার্ভ করেছি বান্দরবান থেকে শৈল প্রপাত পর্যন্ত। প্রকৃতি আমাদের বঞ্চিত করেনি, দিয়েছে তার শ্রেষ্ট রূপ। হুট করে মনে হয়েছে প্রবেশ করেছি হলিউডের কোন সিনেমার দৃশ্যে।


শৈলপ্রপাত ঝর্না বান্দরবান-থানচি রোডের পাশে অবস্থিত । এই প্রপাতের পানি অনেক সচ্ছ ও ঠান্ডা। এই স্পট পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগের ভাল সময় হচ্ছে বর্ষাকাল । এছাড়া এখানে পানি থাকে খুব কম ।


বান্দরবানের যে কোন ঝর্না বর্ষাকালে সুন্দর থাকে । আমরা যখন যাই তখন আকাশে প্রচন্ড রোদ ছিল, আমাদের ভাগ্য ভাল ঝর্নাতে যাওয়ার পর যখন আমরা ছবি তুলছিলাম তখনই ঝুম বৃষ্টি নামে এবং ঝর্নার পানি বেড়ে যায় । দৃশ্যটা দেখতে অনেক সুন্দর লাগছিল ।


বান্দরবান শহর থেকে শৈলপ্রপাত ঝর্না পর্যন্ত আসতে আপনাকে বান্দরবান শহর থেকে জিপ গাড়ী ভাড়া করতে হবে । চাইলে সি এনজি অটো রিকশা নিয়েও আসতে পারবেন । গাড়ি ভেদে ভাড়া পড়বে ৫০০-৮০০ টাকা। পরিবার নিয়ে সাচ্ছন্দে ঘুরার মত একটি জায়গা এটি । পাশেই শপিং করার জন্য ছোট কিছু দোকান পাবেন । মৌসুমি ফলের সময় বিভিন্ন পাহাড়ি ফল পাওয়া যায় এখানে। বিশেষ করে আম । এছাড়া আপনি যদি কম খরচে আসতে চান তবে মাত্র ৩০ টাকা বাস ভাড়াতে শহর থেকে এখানে চলে আসতে পারবেন । এছাড়াও নিলগিরি যাওয়ার পথে এই শৈলপ্রপাত দেখতে পারবেন ।


যদি সুযোগ ও সময় থাকে তবে চলে যাবেন চিম্বুক পাহাড় পর্যন্ত , আমরা বৃষ্টির কারনে আর সামনে যেতে পারিনি । চিম্বুক যেতে সময় লাগবে ঘন্টা খানেক । ভাড়া নিবে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা।


সতর্কতাঃ শৈলপ্রপাতে বর্ষাকালে সাবধানে নামুন । কারন এটী অনেক বেশি পিচ্ছিল থাকে তখন । ময়লা বা চিপস এর প্যাকেট যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলেন । 


পরিবার নিয়ে এখানে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন , খুব একটা সমস্যা হবেনা । আপনি চাইলে একি সাথে গাড়ি ভাড়া করে মিলনছড়ী, শৈলপ্রপাত, মেঘলা, নিলাচল ঘুরে দেখতে পারেন যদি আপনি ৪-৫ ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে বের হয়ে থাকেন। তবে সন্ধ্যায় মাস্ট নিলাচল থাকার চেস্টা করবেন ।


হোটেলঃ

বান্দরবানে থাকার অনেক হোটেল রয়েছে । হোটেল গুলোতে আগে থেকে বুকিং দিয়ে আসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে । আমরা হোটেল হিলভিউতে ছিলাম । ডাবল বেড এর রুম যেখানে ৪ জন থাকতে পারবেন নন এসি রুমের জন্য আমাদের ভাড়া পরেছে ২২৫০ টাকা । এটি একদম বাসস্ট্যান্ডের পাশে ছিল বলে রেন্ট একটু বেশি । যদি আরেকটু ভেতরের দিকে যান তবে আরেকটু কমে পাবেন । হোটেলের কন্ট্যাক্ট নাম্বার এখানে দেয়া হলঃ


হিলভিউ হোটেলঃ 01828-866000


হিলভিউ হোটেলর কিছু স্টাফের সার্ভিস ভাল লাগেনি । এর নিচে রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে দাম তুলনামুলক একটূ বেশি।


তবে আমার সাজেশন হচ্ছে , বান্দরবান আসলে নিলাচল এর রিসোর্ট এ উঠা । এতে আপনি পরিপূর্ণ ভাবে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে পারবেন ।


যোগাযোগঃ

ঢাকা থেকে বান্দরবানের সরাসরি অনেক বাস রয়েছে । কক্সবাজার থেকেও সকালে বাস ছেড়ে আসে সময় লাগে ৩ঃ৩০ ঘন্টা । আর এ ছাড়া দেশের অন্য জায়গা থেকে আসতে চাইলে চিটাগং নতুন ব্রিজ এর কাউন্টার থেকে বাসে করে চলে আসতে পারেন । সময় লাগবে ২ঃ৩০ ঘণ্টা । রাস্তা ভাল, তাই ভয়ের কোন কারন নেই ।


ঢাকা থেকে বান্দরবান বাস ভাড়াঃ ৯০০ টাকা নন এসি, ১৪০০ টাকা এসি।

চট্রগ্রাম থেকে বান্দরবান বাস ভাড়াঃ ২১০ টাকা

কক্সবাজার থেকে বান্দরবান বাস ভাড়াঃ ২৮০ টাকা


ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে আসতে চাইলে নিঃসঙ্কোচে চলে আসতে পারেন বান্দরবান । বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পাহাড়ী এলাকায় ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ