সিলেট আসার আগে অনেকের মনের মধ্যেই একটি প্রশ্ন ঘোরপাক খায় , কোথায় যাব ? কিভাব যাব? কোন জায়গাতে নৌকা চড়তে হয় ? ভাড়া কত? আমাকে আবার ঠকাবে না তো ! আমাদের দেশে ট্যুরিজম এর যে অবস্থা তাতে এসব প্রশ্ন মনের মধ্যে আসা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার । তাই আপনাদের সে সব প্রশ্নের উত্তর আর আপনার যাতে সিলেট ট্রাভেল এ সমস্যা কম হয় তাই আজকে সিলেট এর বিভিন্ন স্পট এ নৌকা ভাড়া কত সেটা এখানে আলোচনা করব । সময় অনুযায়ি আপডেট করে নেব সেসব ভাড়ার তালিকা । সাথে থাকলো এই নিয়ে ইউটিউব ভিডিও ।
একটা কথা শুরুতেই বলে রাখি , সিলেটের কমবেশি প্রায় সব স্পট এ নৌকা যাত্রার প্রয়োজন হয় । বর্ষাকালে এর পরিমান আরও বেশি । অনেক জায়গাতেই এই নৌকা ভ্রমনের ভাড়া নিয়ে নেগোসিয়েশন করতে হয় আবার অনেক জায়গাতে প্রশাসন দাড়া ফিক্সড । ক্ষেত্র বিশেসে এই পোস্ট এর সাথে তাই কিছু টা পরিবর্তন থাকতে পারে ।
তাহলে চলুন শুরু করি ।
সাদাপাথরঃশুরুতেই বলছি সাদাপাথরের কথা । সিলেট থেকে সাদাপাথর মুল স্পটে যেতে হলে আপনাকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ বাই রোড এ গিয়ে তারপর ধলাই নদীতে নৌকা চড়তে হয় । সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ থেকে ধলাই নদী ধরে সহজে ভোলাগঞ্জ বা সাদাপাথর যাওয়ার জন্য রয়েছে ইঞ্জিন নৌকা । এসব নৌকাতে ১০-১২ জন একসাথে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও হয়ত অনেকটা বানিজ্যিক চিন্তাভাবনা থেকেই ৮ জন এর বেশি যাওয়া যায় না এবং এই রুটে নৌকার ভাড়া ধার্য করা হয়েছে ৮০০ টাকা । ৮ জনের কম হলেও আপনাকে একি ভাড়া প্রদান করতে হবে ।
* তবে সোলো ট্যুরিস্টদের কথা মাথায় রেখে এখানে সিট প্রতি লোকাল নৌকার ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে আমি মনে করি । এতে আমাদের দেশ আরও ট্যুরিজম বান্ধব হবে ।
বাংলাদেশে সবচাইতে বড় সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল । এর আসল সৌন্দর্য উপভগ করে রাতারগুলে আপনাকে ৫ থেকে ৬ জনের জন্য ডিংগি নৌকা ভাড়া নিতে ১ নং ঘাট থেকে প্রদান করতে ৭৫০ টাকা , তার সাথে যোগ হবে বন বিভাগের ছোট একটি ফি । সাথে ছাতা না থাকলে ছাতা ভাড়া নিতে পারবেন ২০ টাকা করে । তার মানে আনুমানিক ৫-৬ জনের জন্য ৯০০ থেকে ১০০০ টাকার মত বাজেট রাখতে পারেন সব মিলিয়ে । ছোট এই ডিঙ্গি নৌকা করে বন ঘুরে দেখার জন্য সময় পাবেন ১ থেকে দেড় ঘন্টা ।
বাংলাদেশের সবচাইতে ইউনিক সুন্দর কিছু ট্যুর স্পট এর মধ্যে লালাখাল অন্যতম । লালাখাল সহজে যাওয়ার দুইটি ঘাট রয়েছে , এক হচ্ছে সারিঘাট । যেখান থেকে লালাখাল জিরো পয়েন্ট যেতে সময় লাগে ৪০ মিনিট এবং নৌকা ভাড়া নিবে ১৬৫০ টাকা । এই একটি ইঞ্জিন নউকাতে ৮ থেকে ১০ জন যেতে পারবেন ।
আরেকটি ঘাট হচ্ছে লালাখাল ঘাট , যেখান থেকে জিরো পয়েন্ট যেতে সময় লাগবে ৫ মিনিট এবং ভাড়া নিবে ৬০০-৮০০ টাকা । তবে এই ঘাটে আসতে সড়ক পথে আপনাকে প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা বাড়তি ঘুরতে হবে এবং সব ধরনের গাড়ি নিয়ে আপনি যেতেও পারবেন না ।
পরামর্শঃ লালাখাল এর সম্পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ এর জন্য ১৬৫০ টাকা দিয়ে সারিঘাট থেকে যাওয়াটাই ভাল । সময় কম থাকলে বাই রোড এ গিয়ে লালাখাল ঘাট থেকে যাওয়া উত্তম ।
লালাখালঃ
জানাচ্ছি জাফলং এর কথা । শুকনার সময় জাফলং জিরো পয়েন্ট এ যেতে আপনাকে নৌকা না নিলেও চলবে , হেটে চলে যেতে পারবেন জিরো পয়েন্ট এ । তবে আপনি যদি নদী পার হয়ে মায়াবি ঝর্না , খাসিয়া পল্লি, সংগ্রামপুঞ্জি যেতে চান তবে গাইড খরচ সহ ২০০০ টাকা খরচ করতে হবে , নৌকার ধরন ইঞ্জিন নৌকা । আর যদি নিজে নিজেই ঘুরে দেখতে চান তবে ৪০ টাকা দিয়ে লোকাল নৌকা পার হয়ে নিজেই ঘুরে দেখে আসতে পারবেন ।
বর্ষা বা স্রোতের সময় জিরো পয়েন্ট যেতে নৌকা প্রয়জন হয় । ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা ।
শহিদ সিরাজি লেক বা নিলাদ্রিঃ
সুনামগঞ্জ এর তাহিরপুরে অনিন্দ সুন্দর শহিদ সিরাজি লেক যাকে আদর করে সবাই ডাকেন নিলাদ্রি । এর আসল নাম শহিদ সিরাজি লেক। সুন্দর এই লেক এ এসে নৌকা না চড়লে ট্যুরটাই আসলে জমে না। এই স্বচ্ছ লেকে আধাঘন্টা থেকে ১ ঘন্টা নৌকা চড়তে আপনার খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বসতে পারবেন ৪ থেকে ৬ জন । এখানে অবশ্য ইঞ্জিন নৌকা নেই, হাতে বাওয়া ডিংগি নৌকা । তাই ইঞ্জিন নৌকার বিরক্তিকর শব্দ না থাকায় আপনি শান্ত সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারবেন এই লেক।
বিছানাকান্দিঃ
এরপর চলে যাই বিছানাকান্দিতে । রাস্তা খারাপ হওয়াতে বিছানাকান্দির ট্যুরিস্ট এখন কিছুটা কম তবে এই রুটের নৌভ্রমন টা অনেক সুন্দর বিশেষ করে বৃষ্টির সময় । মেঘালয়ের পাহাড়ে মেঘ দেখতে দেখতে আপনি হারিয়ে যাবেন স্বপ্নের জগতে । বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য আপনাকে বাই রোড এ হাদারপার বাজার এ যেতে হবে । হাদারপার বাজার থেকে ২২৫০ টাকাতে নৌকা রিজার্ভ করে যেতে হবে । নৌকার ধরন ইঞ্জিন নৌকা। যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট । উপরে উল্লেখিত ভাড়া যাওয়া আসা দুটো মিলে ধার্য ।
শাপলাবিল
ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের নিচে এক বিল আর সেখানে ফুটে আছে সারি সারি শাপলা ফুল । এ যেন সিনেমার কোন দৃশ্য , এই দৃশ্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে ঘুরে আসতে হবে শাপলাবিল । শাপলা বিলে ছোট ডীংগি নৌকা করে ঘুরতে আপনাকে খরচ করতে হবে ৫০০-৬০০ টাকা যারা ধারন ক্ষমতা ৪ থেকে ৫ জন , তবে একটু ঝুকি নিয়ে ৬ পর্যন্ত বসতে পারবেন ।
টাঙ্গুয়ার হাওড় হাউজবোটঃ
টাংগুয়ার হাওড় নিয়ে নতুন কিছু না বললেই হয় । নেটিজেন রা ঠিকই জানেন এই হাওড়ের সৌন্দর্য । এই হাওরে সারাদিন থাকার জন্য রয়েছে হাউজবোট এর ব্যবস্থা । যেখানে থাকা খাওয়া , হেটে চলা সবই করা যায় । সারাদিনের জন্য জনপ্রতি হাউজবোট অনুযায়ি ভাড়া পরে প্রায় ৫০০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা ।
বাইশ টীলাঃ
বাইশ টীলা সিলেট শহরের এয়ারপোর্ট এর পাশে এক জনপ্রিয় ট্যুর স্পট । যেখানে বর্ষাকালে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় । এখানে ঘণ্টাপ্রতি নৌকা চড়ার জন্য আপনাকে ৩০০-৪০০ টাকা দিতে হবে । এখানকার নৌকা গুলো ফুল দিয়ে সাজানো থাকে যা আপনাকে কাশ্মিরের কথা মনে করিয়ে দিবে ।
আশা করছি ভাল লেগেছে , এর বাইরে কোন প্লেস এর নৌকা ভাড়া নিয়ে আপনার কাছে প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব । ধন্যবাদ ।
0 মন্তব্যসমূহ