চা এর রাজধানি সিলেট এ স্বাগতম । আমাদের জীবন যাপনে বেড়ে গিয়েছে ব্যস্ততা আর তাই বেশিরভাগ মানুষ এখন ট্যুর এ বের হন সংক্ষিপ্ত সময় নিয়ে । অথচ, চা বাগান , স্বচ্ছ নদি, পাহাড়, হাওড় নিয়ে সিলেট অপেক্ষা করছে আপনার জন্য ।
তাই আজকের ভিডিও তাদের জন্য যারা সিলেটে একদিনে একাধিক স্পট ঘুরে দেখতে চান । যাকে বলে এক ঢিলে তিন পাখি !!!
আজকে আমাদের গন্তব্য সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ - ভোলাগঞ্জ রুট আর ঘুরে দেখবঃ মালনিছড়া চা বাগান - রাতারগুল সয়াম্প ফরেস্ট সাথে মুল আকর্ষণ ভলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট বা সাদা পাথর । থাকছে যাত্রার বিভিন্ন তথ্য এবং খরচের ধারনা ।
তো চলুন শুরু করি আজকের জার্নি ।
সিলেট শহরের আম্বরখানা হয়ে দুই পাশের চা বাগান ধরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি । শহর থেকে বের হওয়ার পর পর চোখে তৃপ্তি দিবে সবুজ চা বাগান। এই রাস্তাটী বাংলাদেশের সবচাইতে সুন্দর রাস্তাগুলোর এক্টী । সিলেট এয়ারপোর্ট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম কিন্তু এই রোড এই।
আগেই বলে নিচ্ছি, যারা লোকাল ট্রান্সপোর্ট এ যাবেন তারা সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে গাড়ি পাবেন তবে আমরা যেহেতু তিনটা স্পটে যাব তাই গাড়ি বুক করেছি । আপনি বিভিন্ন স্পট ও সাইট থেকে গাড়ি বুক করতে পারবেন তার মধ্যে ট্যুর সিলেট অন্যতম ।
আমাদের আজকের প্রথম যাত্রাবিরতি মালনিছড়া চা বাগানে । এই চা বাগান সিলেট শহরের একদম পাশেই । অনেক ট্যুরিস্ট ই ভেবে থাকেন প্রথমে সাদাপাথর ঘুরে পরে চা বাগানে আসবেন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সাদাপাথর বা রাতারগুল দেখে আসার পর দিনের আলো শেষ হয়ে যায় তাই মিস হয়ে যায় চা বাগানের পার্ট ।
মালনীছড়া চা বাগান বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান। ১৮৫৪ সালে লর্ড হার্ডসন ১৫০০ একর জায়গার উপর এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
লর্ড হার্ডসনকে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
এই বাগানের পাশেই রয়েছে লাক্কাতুরা চা বাগান, আলী বাহার টি এস্টেট সহ অনেক গুলো চা বাগান । এক কথায় আপনি প্রবেশ করেছেন বাংলাদেশের চা বাগানের স্বর্গরাজ্যে এবং চলতে চলতে আপনার মনে হতেই পারে , এই পথ যদি না শেষ হয় ।
না, পথ শেষ না হলে আমরা বিপদে পরব কারন আমাদের এখন চলে যেতে হবে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে । বাংলাদেশের অন্যতম বড় ও সুন্দর মিঠা পানির বন । সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং আমাদের বর্তমান স্থান থেকে প্রায় ২০ কিলো মিটার ।
অনেকই আগে সাদা পাথর ঘুরে পড়ে রতার গুলো আসেন।
প্রশ্ন হচ্ছে আমরা আগে সাদাপাথর না গিয়ে কেন রাতারগুল কেন আসলাম , এর একটা কারন হচ্ছে সানলাইট ভাল ভাবে পাওার জন্য, দুপুরের পর থেকে রাতারগুলে আলো কমে আসে । সুন্দর এই বন ও তার আশপাশকে সুন্দর ভাবে উপভগ করার জন্য আমরা আগেই চলে এসেছি রাতারগুল ।
২০১২ সালের আগেও এই প্রাকৃতিক আশ্চর্য ছিল লোকচক্ষুর প্রায় আড়ালে । সেসময় রাকিব কিশোর নামে একজন কার্টুনিস্ট ও পর্যটক রাতারগুল ভ্রমন করে প্রথম আলোতে একটি ফিচার লিখেন , যার শিরোনাম ছিল সম্ভবত জলের উপর বন দোলে । এর পরপরি বাংলাদেশে রাতারগুল নিয়ে হইচই শুরু হয় । লর্ড হার্ডসনের পর দ্বিতীয় ধন্যবাদ রাকিব কিশোর ভাইকে ।
মধ্য দুপুরে সুরযের আলো বেশি থাকলেও গরমে একটু পর পর গাছের ছায়া পাওা যায় রাতারগুলে যে কারণে রোদের কস্ট কম হয় । তবে শিতকাল ছাড়া রাতারগুল আসলে আপানাকে ছাতা বা হ্যাট নিয়ে আসতে হবে । না নিয়ে আসতে পারলেও চিন্তা নেই কারন এখানে ২০ টাকা করে ছাতা ভাড়া পাওা যায় । নৌকা ভাড়া নিবে ৭৫০ টাকা এক ঘন্টার জন্য সাথে বন বিভাগের ফি । তারমানে ৪–৬ জন বা এর কম সংখ্যার টীম এর জন্য ৯০০-১০০০ টাকার মত বাজেট ধরে রাথতে পারেন রাতারগুল ঘুরে দেখার জন্য।
সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটি গাছ "রাতা গাছ" নামে পরিচিত। সেই রাতা গাছের নামানুসারে এ বনের নাম রাতারগুল।
জলমগ্ন বলে এই বনে সাপের আবাস বেশি । যদিও পর্যটক এর আনাগোনার কারনে বেশিরভাগ সাপ ই এখন আত্নগপনে আছে যদিও দুই একটা সাহসি সাপ এখনো মাঝে মাঝে উকি দেয় ! সাথে আছে জোঁক; শুকনো মৌসুমে বেজিও দেখা যায়। এছাড়া রয়েছে বানর, গুই সাপ; পাখির মধ্যে আছে সাদা বক, দেশি কানিবক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি। শীতকালে রাতারগুলে আসে বালিহাঁসসহ প্রচুর পরিযায়ী পাখি, আসে বিশালাকায় শকুনও। মাছের মধ্যে আছে টেংরা, খলিসা, রিটা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউশ, রুই সহ বিভিন্ন জাত।
জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সারা বছর, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এখানে ভিড় করেন পর্যটকগণ। বনের ভিতর ভ্রমণ করতে দরকার হয় নৌকার, তবে সেগুলো হতে হয় ডিঙি নৌকা ডিঙিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় অসাধারণ প্রকৃতি। একটা সময় রাতারগুল এর পানির রঙ কিছু কিছু জায়গায় ছিল স্বচ্ছ আর নিল , কালের পরিক্রমায় এবং অতিরিক্ত পর্যটক এর কারনে হয়ত এখন আর তা দেখা যায় না ।
অনেক ইচ্ছা ছিল রাতারগুল ওয়াচ টাওয়ারে উঠার তবে এখন তা বন্ধ রয়েছে ।
রাতারগুল ভ্রমনের পর আমরা সরাসরি চলে যাব সাদাপাথর । সেখানে দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর ধলাই নদি ধরে নউকা করে চলে যাব মুল স্পটে । সাদাপাথরে খাওয়া দাওয়ার অনেক অপশন রয়েছে তাই এ নিয়ে একদম টেনশন করবেন না ।
ভোলাগঞ্জ দেশের সর্ববৃহত্তম পাথর কোয়ারির অঞ্চল। এখান থেকে ছাতক পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে । এ জায়গার নাম একটা সময় পরযন্ত সবাই ভলাগঞ্জ নামেই জানত কিন্তু হটাত করেই নামকরন করা হয় সাদা পাথর , এ ব্যাপারে কারও কোন তথ্য জানা থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন ।
যাই হোক ডাউকি ব্রিজ প্রতিষ্ঠার আগে ভারতের তৎকালীন শিলংয়ে একসময় লোকজন এ রাস্তা দিয়েই আসাম ও মেঘালয় যাতায়াত করতেন। এখন শিলং বা মেঘলাওয়ের জন্য জাফ্লং এর পাশে ডাউকি পোর্ট ও ডাউকি ব্রিজ ব্যবহার হয়
ভারত বা বিশ্বে সবচাইতে বেশি বৃষ্টি হয় যেখানে সেই চেরাপুঞ্জির পাহারের নিচেই হচ্ছে ভলাগঞ্জ বা সাদাপাথর । ভারতের অন্যতম বিখ্যাত অয়টার ফলস নহকালিকাই ফলস এবং সেভেন সিস্টার অয়াটার ফলস কিন্তু এই জায়গা থেকে একদম কাছাকাছি । তবে দ্রিশ্যমান না ।
চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা এই নদির নাম ধলাই নদী আর এই নদি ধরে এক নৌকাতে ৮ জন যেতে পারবেন সাদাপাথরে । ভাড়া নির্ধারিত ৮০০ টাকা । অনেক ক্ষেত্রে দুইজন বা তিনজন আসেন ঘুরতে তাদের জন্য এই ভাড়াটা একটু বেশি তাই এখানকার প্রশাসন যদি তাদের কথা বিবেচনা করে লেগুনা বা বাসের স্টাইলে নৌকার ব্যবস্থা রাখত তাহলে আমার ধারনা অনেক ভাল হত । তবে অনেক পর্যটককেই দেখা যায় শেয়ার করে যেতে , যদিও ফেরার সময় কিছুটা ঝামেলা হয় কারন একেক গ্রুপ একেক সময় ফিরে আসে ।
তারমধ্যে জানিয়ে রাখি মার্চ থেকে নভেম্বরে এখানে পানি থাকে । মার্চ এপ্রিলের দিকে একটু কম থাকে । শীতের সময় পানি খুব কম থাকে । আবার বর্ষার সময় অনেক বেশি পানি থাকে এবং থাকে স্রোত , এ সময়টাতে সাতার না জানলে পানিতে না নামাটাই ভাল ।
সিলেট থেকে খুব সহজেই একদিনে ঘুরে দেখা যায় এই তিন স্পট । তবে এক্ষত্রে গাড়ি ভাড়া করে নিলে ট্যুর টা সহজ হবে , চাইলে সি এন জি নিয়েও ঘুরতে পারবেন । সি এন জি অটো রিক্সার ক্ষেত্রে ভাড়া নিবে ১৬০০ থেকে ২০০০ , প্রাইভেট কারে ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা এছাড়া সেভেন বা এলেভেন সিটারে খরচ হতে পারে ৩৫০০ থেকে ৬০০০ পর্যন্ত ।
যারা ঘুরে এসেছেন তাদেরকে আবার আমন্ত্রন য আর যারা সামনে আসবেন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে দারুন সুন্দর সবুজ সিলেট ।
যাওয়ার আগে , ঘুরতে গেলে অবশ্যই খাবার বা যে কোন প্যাকেট বোতল যে খানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকি আর আপনার আনন্দ বা হই চই যেন অন্য কারও বিরক্তির কারন না হয়।

 
 
.png) 
.webp) 
 
 
.png) 
0 মন্তব্যসমূহ