আমরা যখন জাফলং ঘুরতে যাই তখন জাফলং এর পিয়াইন নদীর উপর সুন্দর একটি ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে পাই । এত সুন্দর একটি ব্রিজ কিন্ত চাইলেই এখানে যাওয়া যায়না ।
নদির ওইপাশে থাকা সবুজ বিশাল পাহাড় আফসোস বাড়িয়ে দেয় আরো । আমাদের এই দীর্ঘশ্বাসের নাম মেঘালয় । সিমান্তের জটিলতার কারনে ভিসা ছাড়া যা আমাদের কাছে অধরা ।
যাদের ভারতিয় ভিসাতে ডাউকি পোর্ট উল্লেখ আছে তারা চাইলে সহজেই সিলেটের তামাবিল বর্ডার পার হয়ে ভারতের ডাউকি দিয়ে শিলং এ প্রবেশ করতে পারেন । সিলেট থেকে শিলং এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার আর ডাউকি থেকে দূরত্ব ৮২ কিলোমিটার । ডাউকি থেকে শিলং এর দূরত্ব মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টা । এই পথ ধরে যেতে যেতে দেখা যায় অসংখ্য পাহাড় আর পাহাড়ের খাদ । রয়েছে ঝর্না । সিলেট শহর থেকে শিলং পর্যন্ত পৌছাতে ইমিগ্রেশন সহ আপনার সাড়ে ৬ ঘন্টার মত সময় প্রয়োজন হতে পারে ।
আজকের এই পোস্টে জানাব কিভাবে ইমিগ্রেশন পার করে সহজে কম খরচে শিলং এ পৌছাতে পারবেন ।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টঃ
তামাবিল বর্ডার অতিক্রম করার জন্য আপনার প্রথমে একটি ভারতিয় ভিসা থাকতে হবে এবং সেখানে পোর্ট এ বাই ডাউকি বোর্ড লিখা থাকতে হবে । ভিসা পাওয়ার পর আপনার কাজ হচ্ছে ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করা । সোনালি ব্যাংক এর মাধ্যমে ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করা যায় । বাই রোড ট্রাভেল ট্যাক্স ১০০০ টাকা । তামাবিল বর্ডারে আগে সোনালি ব্যাঙ্ক এর শাখা ছিল না তবে এখন আছে তাই এখান থেকে আপনি ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারবেন ।
শুক্রবার ও শনিবারেও এই ব্যাঙ্ক খোলা থাকে তাই চিন্তার কোন কারন নেই । তবে শুক্রবারে অনেক সময় ব্যাংক দেরিতে খোলা হয় । তাই আগে থেকে কেটে রাখাই ভাল ।
ট্রাভেল ট্যাক্স এর ঝামেলা তো গেল । পাসপোর্টে অবশ্যই ডলার এন্ডোরস্মেন্ট করে নিবেন , যাদের ডুয়েল কারেন্সি কার্ড আছে তারা চাইলে সহজেই কার্ড এর মাধ্যমে ব্যাঙ্ক থেক করে নিতে পারবেন । বর্তমানে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের ক্ষেত্রে কম টাকাটে রুপি উত্তোলন করা যাচ্ছে ভারতের এটিএম বুথ গুলো থেকে । আর সিমান্তের খুব কাছে ডাউকি বর্ডারে বুথ রয়েছে তাই চিন্তার খুব একটা কারন নেই । এছাড়া বৈধ উপায়ে ডলার নিয়ে যেতে পারবেন । যা আপনার এন্ডোরসমেন্টে লিখা থাকতে হবে ।
সুতরাং বর্ডার পার হওয়ার জন্য আপনার ৩ টা বাপারে খেয়াল রাখতে হবে ।
১) ভিসা সহ পাসপোর্ট এবং ভিসার মেয়াদ।
২) ট্রাভেল ট্যাক্স।
৩) ডলার এন্ডোরসমেন্ট ।
ইমিগ্রেশনঃ
এবার চলে যাবেন তামাবিল সিমান্তে । তামাবিল সিমান্তে যাওয়ার পর প্রথমেই ইমিগ্রেশন সেন্টারে চলে যাবেন । সেখানে আপনার পাসপোর্ট সহ প্রয়োজনীয় কাগজ চাওয়া হবে । এরপর পাসপোর্টে ইমিগ্রেশনের সিল দেয়া হবে । সেখান থেকে চলে যাবেন কাস্টমস এ । এখানে আপনার ট্রাভেল ট্যাক্স চেক করে আপনার পাসপোর্ট নাম্বার লিখে ব্যাগ এর সংখ্যা লিপিবদ্ধ করা হয় । কাস্টমস এর কাজ শেষ করে চলে যাবেন সিমান্তে । সিমান্তে পৌঁছানোর পর বিএসএফ আপনার তথ্য লিপিবদ্ধ করে নিবে ।
ব্যাস। হেটে হেটে চলে যাবেন ওই পারে । সেখানে প্রথমে বিএসএফ আপনার পাসপোর্ট চেক করবে । ডাউকির নতুন ইমিগ্রেশন সেন্টার সিমান্ত থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে । তবে ভয়ের কারন নেই । এখান থেকে একটী এসি ট্যুর বাস আপনাকে সিমান্ত থেকে ইমিগ্রেশন সেন্টার পর্যন্ত নিয়ে যাবে ।
ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন সেন্টারে যাওয়ার পর প্রথম ইমিগ্রেশনের সিল দিবে ভারিতিয় পাশ থেকে তারপর কাস্টমস চেক হবে । এরপর আবার গাড়ীতে উঠে চলে আসবেন ডাউকি সিমান্তে । বাস ছাড়তে দেরি হলে সেখান থেকে হেটেও চলেও আসতে পারেন তবে খেয়াল করে অবশ্যই ইমিগ্রেশন সিল পরেছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিবেন। না হলে ভবিষ্যতে ঝামেলায় পরবেন ।
গাড়ী ভাড়াঃ
এবার ডাউকি সিমান্তে আসার পর দেখবেন অনেক ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে । চাইলে রিজার্ভ নিতে পারবেন আবার দেখবেন শেয়ারড ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে যারা ৫০০ রুপির বিনিময়ে আপনাকে শিলং শহর পর্যন্ত নিয়ে যাবে । ৫০০ রুপিতে বাংলাদেশি টাকায় বর্তমানে ৬৯০ থেকে ৭০০ টাকা ।
সিলেট থেকে তামাবিল এর বাস ভাড়া ১০০ টাকা আর ডাউকি থেকে শিলং এ আপনার সরবনিম্ন খরচ হবে ৫০০ রুপির মত । তারমানে ৭৯০ টাকার মধ্যেই আপনি ছাইলে সিলেট থেকে শিলং চলে যেতে পারবেন ।
এরবাইরে আপনার খরচ হতে পারে ট্রাভেল ট্যাক্স ১০০০ টাকা । অনেক সময় ইমিগ্রেশনে স্পিড মানি চায় ১০০ টাকা ।
ডাউকি থেকে শিলং যাওয়ার পথে কি কি দেখবেনঃ
ডাউকি বর্ডার পার হলেই অনিন্দ সুন্দর পিয়াইন নদি । বাংলাদেশের জাফলং এর চাইতে কয়েক গুন সুন্দর এই পাশ । তাই যাওয়ার পথে রিজার্ভ ট্যাক্সি থাকলে নদিতে কিছু সময় কাটীয়ে যেতে পারেন । বোটিং ৭০০-১০০০ রুপি নিবে ।
শিলং যাওয়ার পথে ড্রাইভারকে কিছু বাড়তি টাকা দিয়ে রাজি করাতে পারেন লাইটলুম যাওয়ার জন্য । লাইটলুম শিলং এর অন্যতম আকর্ষণীয় একটি জায়গা । যাওয়ার পথেই দেখে নিতে পারলে , আপনি পরের দিন অন্য স্পট এ বেশি সময় কাটাতে পারবেন ।
এছাড়াও যাওয়ার পথে দারুন কিছু স্পট দেখতে পারবেন , তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডাউকি ব্রিজ ও সুন্দর কিছু গ্রাম । রয়েছে ক্যানিয়ন । বৃষ্টির সময় এই ক্যানিয়ন গুলোতে মেঘ এসে জমে থাকে যার সৌন্দর্য না দেখলে বিশ্বাস হয় না।
এছাড়া ডাউকি থেকে শিলং এর বাঁকে বাঁকে রয়েছে সৌন্দর্য । দূর থেকে যদিও মনে হয় পুরো রাস্তা খুব বিপদজনক আসলে কিন্ত তা না । এই পথের প্রায় পুরো রাস্তার দুই পাশে গ্রাম । সেই গ্রাম গুলো দেখার মত সুন্দর । মনে হয় শিল্পির পটে ছবি আকা । একেক ঋতুতে একেক রঙ এর সুন্দর এই গ্রাম গুলো । বর্ষার সময় সবুজ আবার শিতের সময় সোনালী ধান বাড়তি মাত্রা যোগ করে ।
ডাউকি থেকে এক দুই ঘন্টা এগোলে দুই তিনটি ভিউ পয়েন্ট পাওয়া যায় যেখান থেকে খুব সুন্দর পাহাড়ের খাদ দেখা যায় । বৃষ্টির সময় এই খাদ গুলোর মাঝে মেঘ জমে থাকে । এর সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার মত না । এই কয়েকটি জায়গাতে গাড়ি দাড় করিয়ে অবশ্যই এর সৌন্দর্য কিছু সময় উপভোগ করে নিবেন ।
সতর্কতাঃ
শিলং এ প্রায় বার মাসই বৃষ্টি হয়, তাই সাথে সবসময় ছাতা বা রেইনকোট রাখবেন।
শিলং এ প্রায় সবসময় শিত শিত একটা ভাব থাকে তাই সাথে পাতলা সোয়েটার রাখলে ভাল হয় ।
মেঘালয় খাসিয়া প্রধান অঞ্ছল তাই এই অঞ্ছলের খাদ্য অভ্যাসের সাথে আমাদের খাদ্য অভ্যাসের বিস্তর ফারাক রয়েছে । তাই ড্রাই ফুড সাথে রাখবেন কারন রাস্তায় হুট হাট ক্ষুদা লাগলে তখন কস্ট হবে । বর্ডার পারি দিয়ে ডাউকি বাজার থেকে কিছু শুকনা খাবার কিনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে ।
শিলং ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময়ঃ
পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময় নিঃসন্দেহে বৃষ্টির সময় । এসময় পাহাড়ে মেঘের আনাগোনা দারুন সুন্দর সময় উপহার দেয় । তবে শিতকাল বা বসন্তকালেও শিলং এ ঘুরে আপনি খুব আনন্দ পাবেন তবে সে সময় সেখানে অনেক বেশি শীত থাকে । এসময় শিলং এ গোলাপি রঙ এর প্রচুর চেরি ফুল ফুটে যা সবুজের মধ্যে অন্যরকম সুন্দর দৃশ্যের সৃষ্টি করে।
কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে লিখে দিতে পারেন ।
0 মন্তব্যসমূহ