অপ্রিয় হলেও সত্য , দিনে দিনে কঠিন হয়ে আসছে আমাদের আন্তর্জাতিক গন্তব্যগুলো । অনেক দেশ আমাদের জন্য যেমন ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে তেমনি অনেক দেশ যেগুলোতে আগে ভিসা ফ্রি ছিল বা অন এরাইভাল ভিসা ছিল সেগুলোও দিনে দিনে কঠিন করে দিচ্ছে ।
সম্প্রতি আমি ভ্রমন করে এসেছি শ্রীলংকা , সেখানে ছিলাম ৭ দিন । বাংলাদেশে বসে ই-ভিসা আবেদন এবং ইমিগ্রেশন এর সময় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করব আজকের এই পোস্ট এ । একনজরে যদি বলি তাহলে এখানে লিখা বিভিন্ন বিষয়গুলো হচ্ছেঃ
১. শ্রীলংকা ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ।
২. কি কি কাগজ রেডি রাখতে হবে ।
৩. পেমেন্ট প্রক্রিয়া
৪. ডিজিটাল এরাইভাল কার্ড ।
৪. বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন এর ঝামেলা ।
৫. কেমন ছিল শ্রীলংকার ইমিগ্রেশন ?
৬. ফেরার সময় কি ঝামেলা পোহাতে হল ?
৭. বাংলাদেশে ইমিগ্রেশন করে প্রবেশ ।
৮. কাস্টমস ।
৯. টিপস ।
১. শ্রীলংকা ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াঃ
শ্রীলংকাতে যেতে হলে আগে থেকে ই-ভিসা করে যাওয়া সহজ ও সাশ্রয়ি এই ভিসা প্রাপ্তির জন্য আপনাকে প্রবেশ করতে হবেঃ এই লিংক এ । প্রবেশ করার পর সিলেক্ট করবেন “Apply” ।
এরপর সিলেক্ট করবেন ‘Tourist visa’ সেখান থেকে ‘For Individual’ (যদি আপনি নিজে নিজেই করে থাকেন) ।
এরপর পাসপোর্ট এর তথ্য অনুযায়ি আপনাকে ফরম এর বিভিন্ন তথ্য ফিলাপ করতে হবে । যারা আগে ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম ফিলাপ করেছেন এটা সেই ফরম এর মত তবে ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন এর মত এত তথ্য দেয়ার প্রয়োজন হয় না ।
তবে এই ফরম এর একটা জায়গাতে মনের অজান্তে ভুল হয়ে যায় । সেটা হচ্ছে হোটেল এর এড্রেস জানতে চায় যেখানে তার ঠিক নিচে ইমেইল এড্রেস এর ঘর । অনেকেই নিজে নিজে ফিলাপ করতে গিয়ে হোটেলের ইমেইল দিয়ে দেন । তবে এখানে কিন্তু আপনার ইমেইল আইডি দিতে হবে যেখানে আপনাকে ই ভিসা পাঠানো হবে । এই তথ্যগুলো জানতে চাওয়ার পর সাবমিট করলে আপনি শ্রীলংকা কোন বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং যাবেন সেগুলো জানতে চাইবে সাথে ফ্লাইট এর তথ্য । এগুলো ফিলাপ করে পেমেন্ট করে দিলেই আপনি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ই ভিসা পেয়ে যাবেন ।
২. কি কি ডকুমেন্ট আপলোড করতে হয়?
এই সাইটে এপ্লিকেশন করার জন্য এই পোস্ট লিখা পর্যন্ত কোন ডকুমেন্ট বা ছবি আপলোড করতে হয় না । তবে সব তথ্য পাসপোর্ট এর সাথে হুবুহু মিল থাকতে হবে ।
৩. পেমেন্ট প্রক্রিয়া:
এই সাইটের মাধ্যমে ভিসা এপ্লিকেশন এর জন্য আপনাকে ২০ ডলার পেমেন্ট করতে হবে । আপনি আপনার ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসেই পেমেন্ট করতে পারবেন । এই পেমেন্ট এর পর আপনি আপনার মেইলে ইভিসা পেয়ে যাবেন ।
৪. ডিজিটাল এরাইভাল কার্ড:
সেই মেইলেই আপনাকে ভিসার তথ্য দেয়া হবে , এবং ভিসা এপ্রুভ এর পর আপনাকে ডিজিটাল এরাইভাল কার্ড এর একটা লিংক দেয়া হবে । যাত্রা করার ৭২ ঘন্টার মধ্যে এই ফর্ম ফিলাপ করে সাবমিট করে দিলে আপনার ইমিগ্রেশন অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে ।
৪. বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন এর ঝামেলাঃ
শ্রীলংকা হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক সমুদ্রপথে পৃথিবীর অন্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন । যে কারনে আপনার যদি আগে অন্য কোন দেশ ট্রাভেল না করা থাকে অথবা আপনি যদি রেপুটেড কোন জায়গায় চাকুরি না করে থাকেন তবে ইমিগ্রেশন অফিসার আপনাকে অনেক প্রশ্নের মধ্যে ফেলতে পারেন । বিশেস করে যারা ছাত্র বা মধ্যবয়স্ক কিন্তু আসলে টুরিস্ট এর মত ব্যাবহার না তাদেরকেই এই ঝামেলার মধ্যে পরতে হয় বেশি ।
আমার সাথে একজন ছাত্র ছিল তার পাসপোর্ট নিয়ে আটকে রাখা হয় , ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখতে চাওয়া । কাজিন হিসেবে আমি সহযাত্রী ছিলাম বলে তাকে পরবর্তীতে সেখান থেকে ছুটে আসাটা কিছুটা সহজ হয় । আমাকেও তখন আমার ব্যাংক স্টেট্মেন্ট দেখাতে হয় । বলে রাখা ভাল আমার ব্যাংক এ তখন খুবই অল্প পরিমানে টাকা ছিল ।
এখানে কিছু প্রশ্ন আসতে পারে যেমনঃ
ডলার চেক করতে চায় কি না?
আমার কাছে চেক করতে চায় নি , এবং আমার সাথে মাত্র ২০০ ডলার ছিল । তবে সাথে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড ছিল , এটা একটা এডভান্টেজ , তবে আমাদের সাথে কারো ছিলনা । সচরাচর এটা চেক করে না ।
সাথে ল্যাপটপ থাকলে সমস্যা হয় কি না?
আমার সাথে একটি ল্যাপটপ ছিল , সেটার ডিক্লারেশন দিতে হয় নি । তবে আপনি বোর্ডিং এর সময় জানিয়ে রাখতে পারেন ।
৫. কেমন ছিল শ্রীলংকার ইমিগ্রেশন ?
শ্রীলংকার ইমিগ্রেশন খুবই স্মুথ । ঢাকার তুলনায় এখানে কম যাত্রি এস সাথে নামে বলে ভিড় ও তুলনামুলক কম থাকে । আমাদের জিজ্ঞেস করেছিলঃ
শ্রীলংকা কেন এসেছি?
হোটেল বুকিং আছে কিনা? (আমাদের মাত্র ১ রাতের হোটেল বুকিং ছিল , আমি সেটাই দেখিয়েছি)
কোথায় কোথায় যাব?
তারপর সিল দিয়ে দিল । যাত্রার আগে আমরা ডিজিটাল এরাইভাল কার্ড ফিলাপ করে রেখেছিলাম তাই আরও কম সময় লেগেছে । আগেই বলেছি ডিজিটাল এরাইভাল কার্ড ইমেইলে ভিসা পাওয়ার পর ফিলাপ করার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় ।
আমাদের ঠিক আগে কয়েকজন ট্যুরিস্ট ছিলেন যারা শ্রীলংকা হয়ে পালিয়ে যাওার জন্য এসেছেন (এটা তারা প্লেন এ আমাদের সাথে গল্পে গল্পে শেয়ার করেছিলেন) , দেখলাম তাদের ও প্রবেশ করতে সমস্যা হয় নি ।
৬. ফেরার সময় কি ঝামেলা পোহাতে হল ?
ফেরার সময় শ্রীলংকার ইমিগ্রেশন আমাকে আলাদা করে কিছু সময় জেরা করল , এর দুইটা কারন হতে পারে , ৭ দিনের ট্যুরের আমার চেহারা চোরাকারবারির মত মনে হচ্ছিল , দুই, আমি আমার ব্যাগ আমার হাতে না রেখে বারবার একটু সামনে নিয়ে রাখছিলাম , কারন আমার ব্যাগ এর ওজন বেড়ে গিয়েছিল এবং আমার সেটা ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল । ইমিগ্রশন অফিসার আমার পাসপোর্ট খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন , পাসপোর্টে আরো অনেক সিল থাকাতে হয়ত তিনি আর তেমন জেরা করলেন না ।
৭. বাংলাদেশে ইমিগ্রেশন করে প্রবেশ ।
ফেরার পর বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে তেমন কিছুই জিজ্ঞেস করল না । পাসপোর্ট নিয়ে সিল দিয়ে ছেড়ে দিল । ফিরে এলাম দেশে ।
৮. কাস্টমসঃ
যদি আপনার কাছে এমন কোন কিছু কেনা থাকে যেটার জন্য ট্যাক্স দিতে হবে তাহলে সেটার জন্য কাস্টমস এর কাছে আপনাকে এরপর ঘোষণা দিতে হবে , অন্যথায় এরকম কিছু পাওয়া গেলে আপনাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে বা সেই পন্যের জন্য ট্যাক্স প্রদান করতে হবে ।
৯. টিপস ।
প্রতিবার ইমিগ্রেশন এর পর চেক করে দেখবেন সিল দেয়া হয়েছে কিনা ।
যারা ধুমপায়ী তারা সাথের সিগারেট নিয়ে ভয়ে থাকেন , তবে জেনে রাখবেন আপনি সাথে ২০০ শলাকা নিয়ে যেতে পারবেন এতে কোন সমস্যা হবে না । তবে দাহ্য পদার্থ যেমন ম্যাচ লাইট সাথে না রাখাই ভাল ।
লিকুইড যে কোন প্রডাক্ট এর জন্য সমস্যা হতে পারে ।
পান করার পানি সাথে নিতে পারবেন তবে খুবই সামান্য পরিমানে ।
আশা করছি পোস্টটি আপনার জন্য উপকারি হবে । এরপরেও কোন তথ্য জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় লিখতে পারেন । ধন্যবাদ । আমাদের যাত্রার প্লেনের ইউটিউব ভিডিও থাকল আপনাদের জন্য, দেখার আমন্ত্রন রইল ।
0 মন্তব্যসমূহ